পেশা পাল্টাচ্ছে মালিক-শ্রমিকরা
বরিশালে ৪০ বরফ কলের ৩৮টি বন্ধ

filter: 0; fileterIntensity: 0.0; filterMask: 0; brp_mask:0; brp_del_th:null; brp_del_sen:null; delta:null; module: photo;hw-remosaic: false;touch: (-1.0, -1.0);sceneMode: 8;cct_value: 0;AI_Scene: (-1, -1);aec_lux: 0.0;aec_lux_index: 0;albedo: ;confidence: ;motionLevel: -1;weatherinfo: null;temperature: 37;
ফাহিম ফিরোজ, বরিশাল ॥ তিনযুগ আগেও বরিশালে ৪০টি বরফ কল উৎপাদনে ছিলো। মাত্র কয়েক দশকের ব্যবধানে বন্ধ হয়ে গেছে ৩৮টি বরফ কল। মালিক শ্রমিকরা বেছে নিয়েছে অন্য উপার্জনের মাধ্যম। বরফ কল বন্ধের পিছনে মাছের উৎপাদন কমে যাওয়াকে দায়ী করছেন মালিক-শ্রমিকরা।
বরিশাল বরফ কল মালিক সমিতির সূত্র মতে, নব্বইর দশকে বরিশালে ৪০টি বরফ কল ছিলো। মাছের উৎপাদন কমে যাওয়ায় বরফের চাহিদা কমে যায়। ফলে ৩৮টি বরফ কল বন্ধ হয়ে গেছে। এখন নাম মাত্র দুটি বরফ কল চালু আছে।
জানা গেছে, বরিশালে প্রতিদিন ২টি বরফ কল থেকে উৎপাদন করা হচ্ছে প্রায় এক হাজার পিচ বরফের ক্যান। পোর্ট রোড মৎস্য আড়তে প্রতিদিন আড়াইশ থেকে ৩শ পিচ ক্যান বরফ বিক্রি হয়। এছাড়া গরমের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় শরবতের জন্য বিক্রি করা হচ্ছে বরফ ক্যান। পাশাপাশি লাশের প্রক্রিয়াজাত করণে বিক্রি হচ্ছে বরফ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বরিশাল নগরীর বান্দ রোডের অধিকাংশ বরফ কল বন্ধ হয়ে গেছে। কীর্তনখোলা নদীর কোল ঘেষে গড়ে ওঠা এসব বরফ কল এখন প্রাণহীন হয়ে পড়েছে। মাস কয়েক আগেও ৪টি বরফ কল চালু ছিলো। এর মধ্যে আর.আর আইচ ও সেভেন স্টার আইচ চালু থাকলেও চাহিদার অভাবে সাময়িক বন্ধ হয়ে গেছে শিকদার আইচ এবং ফিশ আইচ বরফ ফ্যাক্টরী।
বান্দ রোডের আর.আর আইচ বরফ ফ্যাক্টরীর মিস্ত্রি রিয়াজ ফকির বলেন, একটি বরফ কলে ১৫-২০ জন শ্রমিক কাজ করতো। এখন মাত্র ৫ জন সেই কাজ করে। মাছের উৎপাদন কমে যাওয়া এবং বড় বড় মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র বরফ কল স্থাপনের কারণে বরিশালের এমন অবস্থা বলে মনে করেন তিনি।
বরফ কল শ্রমিক হিরণ বলেন, মাছের ট্রলার পটুয়াখালী-বরগুনা থেকে বরিশাল আসতে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়। এই খরচ বাচাঁতে বরিশাল বিমুখ হচ্ছে ফিশিং ট্রলার।
বরফ কল মালিক বাপ্পি দাস বলেন, এক সময় ফিস ট্রলার বরিশার থেকে বরফ বোঝাই করে সমুদ্রে যেতো। এখন পটুয়াখালী-বরগুনা থেকে তারা সরাসরি সমুদ্রে যাচ্ছে। তাছাড়া মাছের উৎপাদন আগের মতো নেই। ফলে বরফ কলের সংখ্য দিন দিন কমে যাচ্ছে।
এদিকে বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জানা গেছে, সর্বশেষ গত ২০২৩-২০২৪ সালে ৫.২৯ লক্ষ মেট্রিক টন ইলিশ সারাদেশে আহরিত হয়েছে, যা বিগত ২০২২-২৩ সালের চেয়ে ৪২ হাজার মেট্রিক টন কম। তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২০২৩ সালে ইলিশের উৎপাদন ৫.৭১ লক্ষ মেট্রিক টন। ২০২১-২২ সালে ৫.৬৬ লক্ষ মেট্রিক টন, ২০২০-২১ সালে ৫.৬৫ লক্ষ মেট্রিক টন, ২০১৯-২০ সালে ৫.৫০ লক্ষ মেট্রিক টন, ২০১৮-১৯ সালে ৫.৩২ লক্ষ মেট্রিক টন ও ২০১৭-২০১৮ ৫.১৭ লক্ষ মেট্রিক টন ইলিশ উৎপাদিত হয়েছে।
বরিশাল বরফ কল মালিক সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, এক সময় ভোলা-পটুয়াখালী-বরগুনার মাছ বরিশালে আসতো। এখান থেকে প্যাকেজিং করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠানো হতো। বর্তমানে ভোলা-পটুয়াখালী-বরগুনার মাছ প্যাকেজিং করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে। ফলে বরিশালে বরফের চাহিদা কমে যায়। এছাড়া মাছের উৎপাদন কমে যাওয়ায় ব্যাপক প্রভাব পড়েছে বরফ কলের উপর। জাহাঙ্গীর হোসেন আরও বলেন, বন্ধ হওয়া বরফ কলের শ্রমিকরা আজ অন্য পেশায় নিয়োজিত। মাছের উৎপাদন বাড়াতে না পারলে বরফ কলের ঐতিহ্য বিলীনের শঙ্কা করছেন তিনি।