একই ব্যক্তি দুই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন, অনুপস্থিত থেকেও নেন বেতন, নাইট গার্ড রাতে চালান অটোগাড়ি, নৈশ্য প্রহরী করেন পিয়নের কাজ, অফিস করেন না এমএলএসএস, অধ্যক্ষ সুজিত কুমারের সহযোগীরা ধরা ছোয়ার বাহিরে

বরিশাল সিটি কলেজের অনিয়ম-দুর্নীতির ফিরিস্তি

মে ২০ ২০২৫, ১৩:২৮

স্টাফ রিপোর্টার : অনিময়-দুর্নীতির আতুর ঘর নামে পরিচিত বরিশাল সিটি কলেজ। এ কারণে প্রায়ই পত্রিকার শিরোনাম হয় কলেজটি। কলেজটির সাবেক অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে বিপুল পরিমান অর্থ আত্মসাতসহ নানা অনিয়মের কারণে আজও বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না। অডিট প্রতিবেদনে সাবেক অধ্যক্ষ সুজিত কুমার দেবনাথের বিরুদ্ধে ৬৫ লাখ টাকার আত্মসাতের প্রমাণ পেলেও তার সহযোগীরা ধরা ছোয়ার বাহিরে। যাদের মাধ্যমে বিপুল পরিমান অর্থ আত্মসাত করেছেন তাদের নাম অডিট রিপোর্টে উঠে আসেনি। তবে অডিট কমিটির আহবায়ক মেয়াজ্জেম হোসেনের দাবী যে কাগজপত্র পেয়েছি, তাতে কোথাও তাদের অনিয়ম পাওয়া যায়নি। তাছাড়া সাবেক অধ্যক্ষ সুজিত কুমার দেবনাথ তার সময়ের সকল কাগজপত্র নিয়ে গেছেন।

কলেজটির অনিয়ম-দুর্নীতির ফিরিস্তি :

জামাল উদ্দিন। তিনি ল্যাব সহায়ক হিসেবে কলেজটিতে নিয়োগ পান। কিন্তু জামালকে দিয়ে সাবেক অধ্যক্ষ সুজিত কুমার দেবনাথ অর্থের বিনিময় নাইট গার্ডের কাজ করান। জামাল প্রতিদিন কলেজে নাইট গার্ডের কাজ শেষ করে সকালে অপসোনিন ফার্মাসিটিউক্যালসে কাজ করেন। উভয় প্রতিষ্ঠান থেকে ব্যাংকের মাধ্যমে বেতন তোলেন। যা জাতীয় বিশ্বিবিদ্যালয়ের আইনে সম্পুর্ন অবৈধ। তিনি কলেজে নাইট গার্ডের কাজও ঠিকমত পালন করেন না। যার কারণে গত ১৭ মে রাতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির বৈদ্যুতিক তার চুরি হয়ে যায়। তবে কলেজ কর্তৃপক্ষের দাবী, চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারী হওয়ায় তাকে রোস্টার করে নাইট গার্ডের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। অন্য কোন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে কিনা সে বিষয়ে কেউ অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে জামাল উদ্দিন বলেন, কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব রোস্টার করে দিলে আপনার সমস্যা কোথায়? আপনি অপসোনিন ফার্মাসিটিক্যালসে কাজ করতে পারেন কিনা? এমন প্রশ্নের কোন জবাব দেননি।

কহিনুর বেমগ কলি। তিনিও ল্যাব সহায়ক হিসেবে নিয়োগ পান কলেজটিতে। তিনি ঢাকায় মেয়ে জামাই বাড়ি বসবাস করেন। সাবেক অধ্যক্ষ সুজিত কুমারকে অবৈধ আর্থিক সহায়তা দেয়ায় সে কলেজে অনুপস্থিত থেকে নিয়মিত বেতন উত্তোলণ করেছেন। তবে কলেজ কর্তৃপক্ষের দাবী সে অসুস্থ জনিত কারণে ৯ মার্চ থেকে ১৫ মে পর্যন্ত ছুটিতে রয়েছে। কিন্তু এ আগেও মাসের পর মাস অনুপস্থিতের বিষয়টি এড়িয়ে যান। কহিনুর বেগম বলেন, সে স্ট্রোক করে দীর্ঘদিন অসুস্থ্য। যে কারণে ছুটিতে ছিলেন।

আউয়াল হোসেন। তিনি নিম্নমান সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে কলেজটিতে নিয়োগ পান। কিন্তু সাবেক অধ্যক্ষ সুজিত কুমার দেবনাথ তাকে ভারপ্রাপ্ত হিসাব সহকারী দায়িত্বে নিয়োগ দেন। সেই থেকে তিনি ওই দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তার বিরুদ্ধে ২০১৭ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ৬৪ জন শিক্ষার্থীর ফরম পূরণের টাকা ব্যাংকে জমা না দিয়ে আত্মসাত করার অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে তৎকালীন সভাপতির এম,পি জেবুন্নেছা আফরোজের কাছে লিখত অভিযোগ দেয়া হয়েছিল। তবে অডিট কমিটি সাবেক অধ্যক্ষ সুজিত কুমার দেবনাথের বিরুদ্ধে ৬৫ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পেলেও তার হিসাব সহকারী আউয়াল হোসেন রয়েছেন বহাল তব্যিয়তে। কলেজ কর্তৃপক্ষ বলেন, সাবেক অধ্যক্ষ এইচ এম শাহাবুদ্দিন থেকে বর্তমান পর্যন্ত আপটু ডেইট হিসাব দিতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে আউয়াল হোসেন বলেন, তিনি কাগজপত্রে কলেজের নিম্নমান সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটরের দায়িত্ব পালন করছেন। সুজিত কুমারের অবৈধ লেনদেনে সহায়তা দেবার অভিযোগটি অস্বীকার করেন।

আব্দুল লতিফ। তিনি কলেজে নৈশ্য প্রহরী হিসেবে নিয়োগ পান। লতিফ নৈশ্য প্রহরীর দায়িত্ব পালন না করে রাতে অটো গাড়ি চালান। তবে গত ১৭ মে তাকে রোস্টার করে হিসাব শাখার এমএলএসএস পদে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আব্দুল লতিফ বলেন, কলেজ কর্তৃপক্ষ যেখানে দায়িত্ব দেবেন, তা সঠিকভাবে তিনি পালন করেন।

আব্দুল হামিদ। তিনিও নৈশ্য প্রহরী হিসেবে কলেজটিতে নিয়োগ পান। কিন্তু সে দীর্ঘদিন ধরে পিয়নের কাজ করেন। তবে তাকে গত ১৭ মে সকাল সাড়ে ৮ টা থেকে বিকাল ৩ টা পর্যন্ত মূল গেইটে দায়িত্ব ও পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আব্দুল হামিদ বলেন, কর্তৃপক্ষ যে দায়িত্ব দেবেন, তা সঠিকভাবে তিনি পালন করেন।

হেমায়েত উদ্দিন। তিনি কলেজটিতে এমএলএসএস পদে নিয়োগ পান। তিনি বর্তমানে কোন কাজই করেন না। সাবেক অধ্যক্ষ সুজিতের সময় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ভর্তি ও ফরম পূরণের টাকা জমা না দিয়ে আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে হেমায়েতের বিরুদ্ধে। কলেজ কর্তৃপক্ষের দাবী, তাকে ৩টি শোকজ দেয়া হয়েছে। আরও একটা দেয়া হবে, জবাব না পেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। অভিযোগ অস্বীকার করে হেমায়েত উদ্দিন বলেন, ভর্তি ও ফরম পূরণের টাকা সাবেক অধ্যক্ষ সুজিত কুমারের মাধ্যমে জমা দেয়া হয়েছে।

বরিশাল সিটি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো: হাবিবুর রহমান বলেন, যেহেতু তাদের বিরুদ্ধে নানা বিষয় নিয়ে অভিযোগ উঠেছে। সে বিষয়গুলো তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।