চাঁদা না পেয়ে বিএনপি নেতাকে মামলায় ফাঁসিয়ে গ্রেফতার করানোর অভিযোগ বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতা মারযুক আব্দুল্লার বিরুদ্ধে

স্টাফ রিপোর্টার : ১০ লাখ টাকা চাঁদা না পেয়ে সাবেক বিএনপি নেতা মিজানুর রহমান তালুকদারকে জুলাই অভ্যুত্থানের মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, বরিশাল জেলার সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব (পদ স্থগিত) মারযুক আব্দুল্লাহর বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, মারযুকের পক্ষ নিয়ে সত্য মিথ্যা যাচাই না করেই অতি উৎসাহী হয়ে মিজানকে থানায় ডেকে নিয়ে ওই মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানোর অভিযোগ করা হয়েছে কোতয়ালী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে।
বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় বরিশাল প্রেসক্লাবে মিজানুর রহমানের পরিবারের পক্ষ থেকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মিজানুর রহমান তালুকদারের বোন লিপি হাসান।
তিনি বলেন, আমার ভাই বরিশাল নগরীর অতান্ত্য সুপরিচিত একজন ব্যক্তি। তিনি রাজাপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি। বর্তমানে তিনি দীর্ঘ বছর পর্যন্ত তাবলীগ জামাতের সাথী হিসেবে ধর্মীয় কর্মকান্ড করে আসছেন।
বিগত জুলাই বিপ্লবে আমার ভাই রাজপথে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের জন্য নিজের সাধ্যমত যতটুকু পেড়েছেন সহযোগিতা করেছেন। আমার ভাতিজা অর্থাৎ মিজানের ছেলে সাজিদুর রহমান তোহা এবং ওবায়দুর রহমান সাদ জুলাই বিপ্লবে বিএম কলেজ, নথুল্লাবাত এলাকা, চৌমাথা এবং বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে শুরু থেকে সকল আন্দোলন কর্মসূচিতে সরাসরি অংশগ্রহণ করে।
তিনি বলেন, ৫ আগষ্ট স্বৈরাচারী হাসিনা তুমুল গণআন্দোলনের মুখে ভারতে পালিয়ে গেছে। এরপর প্রায় ১০ মাস পরে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন বরিশাল জেলা শাখার যুগ্ম সদস্য সচিব মারযুক আবদুল্লাহ নামে এক ব্যক্তি নিষিদ্ধ সংগঠন আওয়ামী লীগের ‘বি’ টিম হয়ে আর্থিকভাবে লাভবান ও বিএনপি এবং সমমনা রাজনৈতিক দলসমুহের যারা জুলাই বিপ্লবের সপক্ষে আন্দোলন সংগ্রাম করেছে তাদেরকে হয়রানি করার লক্ষ্যে ২৪৭ জন নামধারী আসামি ও অজ্ঞাত ২৫০ জনকে আসামি করে বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।
এ মামলা নিয়ে শুরু থেকেই ব্যাপক প্রশ্ন ওঠে। মামলায় বরিশালের আওয়ামী লীগের সম্মুখ সারির সন্ত্রাসী যারা ছাত্রদের ওপর হামলা চালিয়েছিল তাদের নাম নেই। অথচ নাম আছে সাংবাদিক, ব্যবসায়ীসহ বরিশালের বাহিরের জেলা-উপজেলার লোকদের।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, এই মামলায় আমার ভাইয়ের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে সে আমার ভাইয়ের কাছে ১০ লক্ষ টাকা দাবি করে । ওই টাকা না দেয়ায় তাকে এই মামলায় আসামি করা হয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে বুধবার বেলা সাড়ে ১২ টার দিকে আমার ভাইয়ের নিজস্ব প্রতিষ্ঠান বরিশাল টেকনোক্রাটস পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সামনে মারযুক আবদুল্লাহ ও তার সাথে ২-৩ জন ব্যক্তি অবস্থান নেয়।
পরবর্তীতে পুলিশের একজন এসআই এসে আমার ভাইকে বলে ওসি সাহেব আপনাকে সালাম জানিয়েছে। এরপর তাকে সাথে করে থানায় নিয়ে যায় এবং মারযুক আবদুল্লাহর মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালকে চালান দিয়ে দেয়। বিস্ফোরক মামলা হওয়ায় আদালত তাকে জামিন না দিয়ে কারাগারে প্রেরণ করেন।
লিপি হাসান দাবি করেন, মামলার বাদী মারযুক আবদুল্লাহ একটি বিশেষ শ্রেণির এজেন্ডা বাস্তবায়নের মিশনে কাজ করছে। তার এই মামলা বাণিজ্য ও চক্রান্ত সকলের সামনে প্রকাশ পেয়েছে এবং জাতীয় ও স্থানীয় গণমাধ্যমে এসেছে। এমনকি মামলা বাণিজ্যের কারণে তার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সকল পদ স্থগিত করা হয়েছে। তবুও থামেনি এই মামলাবাজ দানব।
পাশাপাশি তার এই অবৈধ কাজে সহযোগিতা করছেন কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মিজানুর রহমান এবং কয়েকজন এসআই। তারা এ মামলায় ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আসামি করা নিরীহ ব্যক্তিদের গ্রেফতার করতে খুব উৎসাহী। অথচ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া অন্যান্য মামলার আসামী এবং সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
এসময় তিনি মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার তার ভাই মিজানুর রহমান তালুকদারের মুক্তি দাবি করেন। একই সাথে মামলাবাজ, অর্থলোভী মারযুক আবদুল্লাহ ও অতিউৎসাহী পুলিশ সদস্যদের বিচার দাবি করেন লিপি হাসান।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতা মিজানুর রহমানের স্ত্রী, দুই ছেলে, ১৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সতস্য সচিবসহ বিএনপি ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।