হিজলায় ‘আমার দেশ’ পত্রিকার প্রতিনিধির উপর বিএনপি নেতার হামলা, উদ্ধার করলো পুলিশ

স্টাফ রিপোর্টার : বরিশালের হিজলা উপজেলার মেঘনা নদীর ভাঙন কবলিত এলাকা থেকে অবৈধভাবে মাটি কাটার ছবি ও ভিডিও করতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন ‘দৈনিক আমার দেশ’ পত্রিকার হিজলা উপজেলা প্রতিনিধি ইয়ামিন মোল্লা। গত সোমবার (একুশে জুন) দুপুরে উপজেলার মেমানিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম ডাইয়া গ্রামে এ ঘটনাটি ঘটে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ইদ্রিস মাঝি ওরফে মরু, যিনি বিএনপি-এর সাবেক সেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন, সাংবাদিক ইয়ামিন মোল্লাকে অবরুদ্ধ করে মারধর করেন এবং তার মোবাইল ও ক্যামেরা ছিনিয়ে নেন। এরপরে, স্থানীয়রা থানা পুলিশকে খবর দেয় এবং পুলিশ এসে ইয়ামিন মোল্লাকে উদ্ধার করে।
এলাকার একাধিক বাসিন্দার অভিযোগ অনুযায়ী, মেমানিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম ডাইয়া গ্রামটি মেঘনা নদীর ভাঙনের শিকার হয়ে দিনে দিনে সংকটে পড়ছে। এলাকাবাসী মনে করেন, নদীর তীর থেকে অবৈধভাবে মাটি কাটার কারণে মেঘনা নদী আরও ভয়াবহভাবে ভাঙছে। তারা অভিযোগ করেন, ইদ্রিস মাঝি ওরফে মরু তার মেসার্স এস বি সি ব্রিকস-এর জন্য ভেকু দিয়ে নদীর তীর থেকে অবৈধভাবে মাটি কাটছিলেন।
এদিন সকালে, ইয়ামিন মোল্লা ঘটনাস্থলে গিয়ে মাটি কাটার ছবি তুলেন এবং ভিডিও ধারণ করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মরু তাকে মারধর করেন এবং মোবাইল ও ক্যামেরা ছিনিয়ে নিয়ে তাকে অবরুদ্ধ করে রাখেন। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ইদ্রিস মাঝি এই এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ কার্যকলাপ করে আসছেন। তাকে বাধা দিলে তিনি ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাদের আঘাত করতে ছাড়েন না। নজরুল ইসলাম কাজী নামের এক বাসিন্দা জানান, “ইদ্রিস মাঝি আমার জমি থেকে মাটি কেটে নিয়েছে এবং বাধা দিলে আমাকে রক্তাক্ত জখম করেছে।”
এছাড়া, অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. খলিলুর রহমান বলেন, “মরু যে জায়গা থেকে মাটি কাটছে, সেটি আমার জমি। আমি তাকে নিষেধ করেছি, কিন্তু সে আমার কথা শোনেনি এবং জোরপূর্বক মাটি কেটে নিয়েছে।”
এলাকার লোকজন খবর পেয়ে পুলিশকে জানায় এবং ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে সাংবাদিক ইয়ামিন মোল্লাকে উদ্ধার করে। তবে, ঘটনার সময় ইদ্রিস মাঝি পুলিশের সামনেই সাংবাদিককে হুমকি দেন এবং বলেন, “যদি পত্রিকায় নিউজ প্রকাশিত হয়, তবে ইয়ামিন মোল্লাকে দেখে নেব।”
স্থানীয় যুবদল নেতা রাজু জানান, “এমন ধরনের ঘটনার প্রতিকার অবশ্যই হতে হবে। আমরা চাই পুলিশ যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করুক।” এছাড়া, উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট দেওয়ান মনির হোসেন বলেন, “ইদ্রিস মাঝি বর্তমান কোনো কমিটিতে নেই। যদি এমন ঘটনা ঘটে থাকে, তবে আমরা এর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিব।”
এই ঘটনাটি স্থানীয় প্রশাসন ও বিএনপি নেতাদের জন্য একটি নতুন চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে। পুলিশের প্রাথমিক তদন্ত এবং এলাকাবাসীর প্রতিক্রিয়া অনুযায়ী, ঘটনাটি দ্রুত মীমাংসা করার চেষ্টা করা হবে। তবে, তদন্তের পর এই বিষয়ে দুর্নীতি ও অবৈধ কার্যকলাপের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে।