স্পীডবোট দূর্ঘটনায় চালকই দায়ী, ছিলো না অনুমোদন: তদন্ত কমিটি
বরিশালে চলাচল করে ৩ শতাধিক অবৈধ স্পীডবোট

ফাহিম ফিরোজ !! বরিশাল থেকে বিভাগের বিভিন্ন জেলায় প্রতিদিন প্রায় সাড়ে ৩শ স্পীডবোট ছেড়ে যায়। এর মধ্যে মাত্র ৪০টি স্পীডবোটের লাইসেন্স রয়েছে। বাকী স্পীডবোটগুলো অবৈধভাবে চলাচল করছে। যদিও বরিশাল স্পীডবোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অহিদুল আলমের দাবী ‘বরিশাল ডিসিঘাট থেকে কোন অবৈধ লাইসেন্স বিহীন স্পীডবোট চলাচল করছে না। এখানের সকল চালক দক্ষ ও অভিজ্ঞ। দূর্ঘটনার শিকার হচ্ছে বরিশালের বাহিরের স্পীডবোটগুলো। অবৈধ স্পীডবোট রুখতে ভোলার সাথে আমরা কথা বলেছি। অবৈধ স্পীডবোট বন্ধ না করা পর্যন্ত আমরা কোন স্পীডবোট ছাড়বো না।’
বরিশাল নদী বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল থেকে ভোলা রুটে মাত্র ২২টি বৈধ স্পীডবোট রয়েছে। কিন্তু এ রুট থেকে প্রতিদিন প্রায় ১২৫টি স্পীডবোট বরিশাল থেকে ছেড়ে যায়। অপরদিকে ভোলা থেকেও প্রতিদিন ১২৫টি স্পীডবোট ছেড়ে আসে বরিশাল। একইভাবে বরিশাল লাহারহাট থেকে ভোলার বেদুরিয়া রুটে বৈধ স্পীডবোট রয়েছে মাত্র ১৬টি। কিন্তু এ রুট থেকে প্রতিদিন প্রায় ৩০ থেকে ৪০টি স্পীডবোট চলাচল করে।
এছাড়া বরিশাল তালতলী থেকে মেহেন্দীগঞ্জের পাতারহাট রুটে মাত্র ২টি বৈধ স্পীডবোট রয়েছে। কিন্তু এ রুট থেকে প্রতিদিন প্রায় ৬০ থেকে ৭০টি স্পীডবোট চলাচল করে। এ সব রুটের চালকদের অধিকাংশ অদক্ষ এবং বোটগুলো অবৈধ। লাইফ জ্যাকেটও থাকে না বোটগুলোতে। এছাড়া বাড়তি ভাড়া নেয়ার নৈরাজ্যতো রয়েছেই।
নদী পথে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অবৈধ স্পীডবোট। এতে প্রায়ই ঘটছে দূর্ঘটনা ঝড়ছে প্রাণ। তবুও নিরব প্রশাসন। নৌ-পুলিশ, কোস্ট গার্ড ও নদী বন্দর কর্তৃপক্ষসহ প্রশাসনের বিভিন্ন সংস্থা নিচ্ছে না কোন পদক্ষেপ। অথচ প্রতিটি দফতর নিতে পারে পদক্ষেপ।
বরিশাল নদী বন্দর কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে স্পীডবোট মালিক সমিতিকে চিঠি দেয়া হয়েছে। চলতি পথে কোন ভাড়া নেয়া যাবে না। টোকেনের মাধ্যমে ভাড়া নিতে হবে। প্রতিটি বোটে লাইফ জ্যাকেট থাকতে হবে এবং যাত্রীদের বাধ্যতা মূলক পড়তে হবে। অবৈধ স্পীডবোট বন্ধে অভিযান অব্যহত রয়েছে।
অপরদিকে চালকের দায়িত্বহীনতায় কীর্তনখোলা নদীতে স্পীডবোট দূর্ঘটনা ঘটেছে বলে প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। পাশাপাশি দূর্ঘটনা কবলিত স্পীডবোটটি লাইসেন্স বিহীন ছিলো। তদন্ত শেষে গত সেমবার নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর প্রতিবেদন প্রেরণ করা হয়েছে।
তদন্ত প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৩ টায় কীর্তনখোলায় ভোলা ভেদুরিয়া লঞ্চঘাট থেকে বরিশালের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা নামবিহীন যাত্রীবাহী স্পীডবোটের সাথে একটি মালবাহী স্টীলবডি ট্রলারের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের ফলে স্পীডবোটটি সম্পূর্ণভাবে নদীতে নিমজ্জিত হয়।
স্পীডবোটে চালকসহ ৯ জন যাত্রী ছিলো। এর মধ্যে ৪ জন যাত্রী নিখোঁজ হয় এবং স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় ৫ জন সাঁতরে নদীর তীরে উঠতে সক্ষম হয়। তবে উদ্ধারকৃতদের মধ্যে ২ জন যাত্রীর অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় তাদেরকে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য প্রেরণ করা হয়।
পরবর্তীতে কর্তব্যরত চিকিৎসক মোঃ ডালিম মাহমুদ (৩৫) নামে একজনকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এর চারদিন পরে ৮ ডিসেম্বর আরো ৩ জনের ভাষমান মরোদেহ উদ্ধার করে নৌ-পুলিশ। এরা হলেন, স্পীডবোট চালক ও ভোলার উত্তর চর ভেদুরিয়া এলাকার মোঃ সিদ্দিকের ছেলে মোঃ আল আমিন, যাত্রী একই জেলার সাহাবুদ্দিনের ছেলে মোঃ ইমরান হোসেন ইমন (২৯) ও কলাপাড়া উপজেলার নওয়াপাড়া এলাকার আজগরআলী হাওলাদারের ছেলে মোঃ রাসেল আসিন (২৪)। এছাড়া এ দূর্ঘটনায় অজ্ঞাতনামা আরো একজন নিখোঁজ রয়েছেন।
বরিশাল নদী বন্দর কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাকের প্রেরিত এ প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, দূর্ঘটনা থেকে বেঁচে যাওয়া যাত্রী মোঃ শাহিন জানায় স্পীডবোটে থাকা সকল যাত্রীই লাইফ জ্যাকেট পরিহিত ছিলো। স্পীডবোটটি বরিশালস্থ কীর্তনখোলা নদীর মোহাম্মদপুর নামক স্থানে এলে চলমান অবস্থায়ই চালক যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়ার টাকা উত্তোলনে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। ফলে চালক বিপরীত দিক থেকে আসা মালবাহী স্টীলবডি ট্রলারটি লক্ষ্য করতে না পেরে স্পীডবোটটি ট্রলারের উপড়ে উঠিয়ে দেয়। এতে স্পীডবোটটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়। তাৎক্ষণিকভাবে স্পীডবোটটির সকল যাত্রী নিয়ে নদীতে ডুবে যায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, স্পীডবোটের চালক একই সাথে স্পীডবোট চালানো এবং ভাড়া আদায় নিয়ে ব্যস্ত ছিল। তাই স্পীডবোটটি চালকের নিয়ন্ত্রণের বাহিরে চলে যায় এবং দূর্ঘটনা কবলিত হয়। চালকের এরূপ দায়িত্বহীনভাবে বোট পরিচালনার জন্য এ দূর্ঘটনা ঘটে বলে প্রাথমিকভাবে দূর্ঘটনার জন্য স্পীডবোট চালকই দায়ী বলে প্রতিয়মান হয়। এ বিষয়ে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করার জন্য নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা পরিচালককে অনুরোধ করা হয়েছে।