পিরোজপুরে ব্যাট কারিগরদের কপালে চিন্তার ভাজ

জানুয়ারি ১২ ২০২৫, ১৯:১৯

পিরোজপুর প্রতিনিধি !! পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার বিন্না গ্রামকে সবাই চেনে ‘ক্রিকেট ব্যাটের গ্রাম’ হিসেবে। বিন্নাসহ আশপাশের ১৫টি গ্রামের ১০ থেকে ১২ হাজার মানুষ জীবিকা নির্বাহ করেন ব্যাট তৈরি করে। তবে ভারত ও পাকিস্তানের তৈরি ব্যাট বাংলাদেশে আসায় তাদের তৈরি ব্যাটের চাহিদা কিছুটা কমে গেছে। এতে চিন্তায় পড়েছেন পিরোজপুরের ব্যাট কারিগররা।

জানা যায়, পিরোজপুর সদর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে নেছারাবাদ উপজেলার বলদিয়া ইউনিয়নের বিন্না গ্রাম। অবহেলিত এ জনপদটিতে আধুনিকতার কোনো ছোঁয়া পড়েনি এখনও। তবুও বসে নেই এ গ্রামের নারী-পুরুষরা। ক্রিকেট ব্যাট তৈরি করে হাজারো কারিগরের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে এ নেছারাবাদ উপজেলায়। কয়েকযুগ থেকেই কাঠ ব্যবসায় সমৃদ্ধ অঞ্চল হিসেবে ব্যাপক পরিচিত নেছারাবাদের ইন্দেরহাট, বিন্না, জিলবাড়ি, চামি, ডুবি, উড়িবুনিয়া ও বলদিয়াসহ ১৫টি গ্রাম। আর এসব গ্রামেই গড়ে উঠেছে অসংখ্য ক্রিকেট ব্যাট তৈরির কারখানা। বর্তমানে কারখানার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে শতাধিকেরও বেশি। ফলে এ শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ১০ থেকে ১২ হাজার শ্রমজীবী মানুষ জড়িত রয়েছেন।

স্থানীয় ব্যাট কারিগররা বলেন, নেছারাবাদে তৈরি ব্যাট ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্নস্থানে বিক্রির জন্য পাঠানো হয়। দেশীয় ব্যাটের বড় অংশ উৎপাদিত হয় পিরোজপুরে। এর বাইরে যশোর ও ঝিনাইদহে ব্যাট তৈরি হয়। পিরোজপুরে দুই ধরনের ক্রিকেট ব্যাট তৈরি হয়। বাচ্চাদের খেলনা ছোট ব্যাট এবং লোকাল ক্রিকেটে টেপ টেনিস খেলার জন্য ব্যাট তৈরি হয়। আগে ভারত ও পাকিস্তান থেকে শুধু আন্তর্জাতিক মানের ব্যাটগুলো বাংলাদেশে আসতো এখন সেখান থেকে লোকাল ব্যাটগুলোও আসছে। এতে করে বাংলাদেশি ব্যাটের চাহিদা কিছুটা কমে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে ক্ষতির শঙ্কা করছেন তারা।

রফিকুল ইসলাম নামে এক ব্যাট কারিগর বলেন, আমাদের এখানে ব্যাট তৈরির জন্য আমড়া, কদম, গাউয়া, নিমশিশু, তুলা, ডুমুর আর ছাতিম গাছ ব্যবহার হয়। এই গাছগুলো স্থানীয় কৃষক পরিবার থেকে কেনা হয়। এরপর সাতটি স্তরের মাধ্যমে ব্যাট তৈরি করা হয়। প্রথমে একটি গাছ সমিলে নিয়ে মূল অংশ তৈরি করা হয়। তারপর তাতে লাগানো হয় হাতল। এরপর ব্যাটের কাঠামো তৈরি হয় ফিনিশিং এর মাধ্যমে। এই ফিনিশিং প্রক্রিয়া আধুনিক না হওয়ার কারণে সময় লাগে একটু বেশি। ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে একটি ব্যাট তৈরিতে ১৫-২০ দিন সময় লাগে। এরপর স্টিকার করে বিক্রি করা হয়। আগে লোকাল ব্যাটগুলো শুধু আমাদের দেশেরই হতো এখন ভারত-পাকিস্তান থেকে লোকাল ব্যাটও আসছে এতে আমাদের বিক্রি কমে গেছে।

কারিগর মো. আসাদুল ইসলাম বলেন, সরকার চাইলে আমাদের কিছু লোন দিয়ে সহায়তা করলে আমরা আন্তর্জাতিক মানের ব্যাট তৈরি করতে পারব। যা দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করা যাবে। এছাড়া ভারত পাকিস্তানের ব্যাটগুলো আসা বন্ধ করলে আমরা লাভবান হতে পারব।

স্থানীয় বাসিন্দা মোস্তাক বিল্লাহ বলেন, প্রথমে ব্যাট তৈরি এই গ্রাম থেকে শুরু হলেও পরে আশপাশের ইন্দেরহাট, ঝিলবাড়ি, চামি, ডুবি, কুড়িবুনিয়া, পঞ্চবুটি, আউরবুনিয়াসহ প্রায় ১৫টি গ্রামে ব্যাট তৈরি হচ্ছে। করোনার পর উৎপাদন কমেছে। তবে ঘুরে দাড়াঁনোর চেষ্টা করছে সবাই। তাদেরকে যদি সরকারি সহায়তা দেওয়া হয় এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার যদি উন্নতি করা যায় তবে এই ব্যাট দেশ ও দেশের বাইরে ব্যাপকভাবে বিক্রি করে এখানের ব্যবসায়ীরা লাভবান হতে পারবে।

এ বিষয়ে নেছারাবাদ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মনিরুজ্জামান বলেন, নেছারাদের বিন্না গ্রামের ব্যাটশিল্প রক্ষার্থে সরকারি যে কোনো সহযোগিতার প্রয়োজনে আমরা তাদের পাশে আছি। তাদের এই ব্যবসার প্রচার ও প্রসারের স্বার্থে তাদের পাশের থেকে উপজেলা প্রশাসন কাজ করছে। তাদের সমস্যা নিয়ে আমি তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা বলা মাত্রই তাদের যেকোনো সমস্যা সমাধানে কাজ করা হবে। এছাড়া এখানে যোগাযোগ উন্নয়নেও চেষ্টা অব্যাহত আছে পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট কোনো প্রণোদনা পেলে উপজেলা প্রশাসন দ্রুতই তাদের পৌঁছে দেবে।