ছাত্রদল নেতা ইমরান হায়দার জিয়া হত্যা

হামলার পাঁচ বছর পর সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু, তার ৯ বছর পর হত্যা মামলা

ফেব্রুয়ারি ০১ ২০২৫, ১৮:৫১

স্টাফ রিপোর্টার !! ২০১০ সালে ২৮ অক্টোবর, সকাল ১০টা ছুঁইছুঁই। পটুয়াখালী জেলা ছাত্রদলের সাবেক আইন বিষয়ক সম্পাদক ইমরান হায়দার জিয়া বাজারে কারো জন্য অপেক্ষা করছিলেন। ঠিক তখনই আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগি সংগঠনের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী দেশীয় অস্ত্র নিয়ে জিয়ার ওপর ঝাপিয়ে পড়েন। বাম চোখ খুঁচিয়ে রক্তাক্ত জখম করে। পাশাপাশি হাত-পা ভেঙ্গে পাখিমারা বাজারে ফেলে রাখেন। প্রায় সাড়ে চার মাস চিকিৎসা শেষে জিয়া গ্রামের বাড়ি ফেরেন।

২০১৫ সালের ২৫ মে সকালে সাড়ে ৮টার দিকে মোটরসাইকেল নিয়ে বালিয়াতলী থেকে বাবলাতলা শ্বশুড়বাড়ি যাচ্ছিলেন। হাড়িপাড়া এলাকার গাজির বাড়ি অতিক্রমকালে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি মোটরসাইলের সঙ্গে মুখোমুখী সংঘর্ষ ঘটে। জিয়া মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে গিয়ে গাছের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। তখন গাছের ডাল মাথার পেছন দিয়ে ঢুকে ডান চোঁখ নিয়ে বের হয়ে আসে। কলাপাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসা হলে দুপুরের দিকে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

দুর্ঘটনায় জিয়ার মৃত্যুর প্রায় নয় বছর পর ২৪ সালের ৮ সেপ্টেম্বর জিয়ার ভাই তাইফুর রহমান আরিফ আদালতে হত্যা মামলা করেন। মামলায় প্রয়াত প্রতিমন্ত্রী মাহবুব তালুকদার, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম রাকিবুল আহসান, কলাপাড়া পৌরসভার সাবেক মেয়র বিপুল চন্দ্র হালদার, নীলগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বাবুল মিয়াসহ ৪১জনকে আসামী করা হয়। উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম-আহবায়ক আরিফরে দায়ের করা মামলাটি আদালতের নির্দেশে কলাপাড়া থানার ওসি ১৯ সেপ্টেম্বর রুজু করেন।

পাল্টা-পাল্টি অভিযোগ: হত্যা মামলার বাদী আরিফ বলেন, মামলা দায়েরের পর আসামীদের সঙ্গে বুধবার পটুয়াখালীতে প্রথম দেখা হয়। আসামীরা তাকে দেখে আদালত থেকে পালিয়ে যায়। এ ঘটনার পর কি হয়েছে, তা তিনি জানেন না। মামলা প্রসঙ্গে বলেন, আমার ভাইকে আসামীরা পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছিল। তখন এ ঘটনায় মামলা তো দুরের কথা, হাসপাতালে ময়না তদন্ত করতে দেয়নি। তাই ঘটনার নয় বছর পর মামলা করেছি।

হত্যা মামলার আসামী নীলগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান বাবুল মিয়া। তিনি বলেন, জিয়া সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। সেটা কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে। মুলত সেই তথ্য দিয়েই মিথ্যা হত্যা মামলা থেকে আমরা উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়েছি। তিনি আরো বলেন, জিয়াকে ২০১০ সালে মারধোর করা হয়েছিল। তার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা নির্যাতনের ঘটনায় স্থানীয়রা তাকে পিটিয়েছিল। এই ঘটনার সঙ্গে আমার পরিবারের কোন সম্পর্ক নেই। তবুও হয়রানি করার জন্য হত্যা মামলা দায়ের করেছে।

কলাপাড়া থানার ওসি জুয়েল ইসলাম বলেন, আদালতের নির্দেশে হত্যা মামলাটি রুজু করা হয়েছিল। তার পর মামলাটি তদন্তের জন্য পুলিশ মাঠে নেমেছে। কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. ফারহা তাসনিম তৃনা চলতি বছরের ৩ নভেম্বর ডেথ সার্টিফিকেট দিয়েছেন। পাশাপাশি কলাপাড়ার নীলগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ৩০ অক্টোবর মৃত্যু সনদ সংগ্রহ করেছি। সেখানে মৃত্যুর কারণ সড়ক দুর্ঘটনা উল্লেখ রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলমান রয়েছে।

আসামীকে অপহরণ শেষে নির্যাতন: জিয়া হত্যা মামলায় গতবছরের ২৩ ডিসেম্বর উচ্চ আদালত থেকে জামিন পান আসামিরা। উচ্চ আদালত আসামিদের ছয় সপ্তাহের মধ্য নিম্ন আদালতে হাজির হতে বলেন। এ জন্য বুধবার দুপুরে আসামিরা পটুয়াখালী জেলা জজ আদালতে হাজিরা দিতে আসেন। হঠাৎ আদালত চত্বরে মারধর চলতে দেখেন। পরে তাঁদের মধ্য থেকে সোহাগ নামের একজনকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে চোখ বেঁধে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে হাঁটুতে হাতুড়ি দিয়ে পেটায়। পরে স্থানীয় এক ইউপি সদস্য তাঁকে উদ্ধার করে পটুয়াখালী বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছে দেন। এরপর আমতলী থেকে তাঁকে উদ্ধার করে তাঁরা কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর তাঁকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

আসামীকে অপহরনের ব্যাপারে পটুয়াখালী আদালত পুলিশের উপ-পরিদর্শক শামসুর রহমান বলেন, `তাঁরা মূলত আদালতের ভেতরের বিষয়গুলো দেখেন। কাউকে তুলে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে জানেন না। এমনকি এ ব্যাপারে কেউ লিখিতভাবে কিছু অবহিত করেনি। তাই এই ব্যাপারে আইনগত কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।’

পটুয়াখালী সদর থানার ওসি ইমতিয়াজ আহম্মেদ বলেন, `আদালত চত্বরে একটি ঘটনা শুনে পুলিশ পাঠানো হয়। কিন্তু পুলিশ গিয়ে কাউকে পায়নি। এরপর একটি নম্বর সংগ্রহ করে জানতে পারেন, তিনি (আহত ব্যক্তি) আমতলীতে চলে গেছেন। ঘটনাস্থল পটুয়াখালী হলেও কেউ থানায় কোন অভিযোগ দেয়নি।’