ফাহিম ফিরোজ !! দীর্ঘ ১৫ বছর পরে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সম্মেলন করতে যাচ্ছে বিএনপি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী সাশনামলে সভা-সমাবেশ করতে না পারা দলটির কার্যক্রম ঝিমিয়ে পরে। আগামী জাতীয় নির্বাচনসহ শেখ হাসিনার দোসরদের রুখতে দলটির কার্যক্রমে গতি ফেরাতে সম্মেলনের ঘোষণা দেয় কেন্দ্রীয় বিএনপি। তাই বেধে দেয়া সময়ের মধ্যে বরিশাল জেলা-মহানগরসহ সকল উপজেলা-পৌরসভা এবং ওয়ার্ড বিএনপির কমিটি গঠনে তোরজোড় শুরু হয়েছে তৃণমূলে। সম্মেলনকে ঘিরে নেতাকর্মীদের মাঝে উচ্ছাসিত মনোভাব সৃস্টি হয়েছে।

ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ৬০ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়ায় মিন্টু, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুল হক নান্নুকে সম্মেলনের মাধ্যমে বরিশাল বিভাগের অধীন মহানগর ও জেলা, পৌরসভা, উপজেলা এবং ইউনিয়ন, ওয়ার্ড বিএনপির পুনাঙ্গ কমিটি গঠনের দায়িত্ব দেয়া হয়।

মহানগর ও জেলার সভাপতি-আহ্বায়ক, সাধারণ সম্পাদক-সদস্য সচিবদের সাথে বৈঠকের মাধ্যমে সম্মেলনের দিনক্ষণ নির্ধারণ করবে নেতৃবৃন্দ। কমিটিতে ত্যাগী ও যোগ্য নেতাকর্মীদের মধ্য থেকে বাছাই করে প্রথম পর্যায়ে বিভিন্ন ওয়ার্ড ও পৌরসভার কমিটি গঠন হবে। এরপরে গঠিত হবে উপজেলা বিএনপির কমিটি।

বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, গত ১৫ বছরে স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের আমলে যে সব নেতাকর্মীর হামলা মামলা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন কমিটি গঠনে তাদেরকে প্রাধান্য দিবে নেতৃবৃন্দ। তারা আরও বলেন, শেখ হাসিনা অবৈধভাবে ক্ষমতা নেয়ার পর বিএনপির একজনকর্মীও শান্তিতে বসবাস করতে পারেনি। হামলা মামলার ভয়তে ঘর ছেড়ে পালিয়ে ছিলো। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পরে নেতাকর্মীরা নতুনভাবে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন। দল তাদের মূল্যায়ন করবে এমনটাই আশা করেন তারা। এছাড়া সম্মেলনে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে প্রধান অতিথি হিসেবে দেখতে চান তারা।

জানা গেছে, বরিশাল মহানগর বিএনপির অধীন ৩০টি ওয়ার্ডের কমিটি বিলুপ্ত করা হবে। এরপর ত্যাগী ও যোগ্য নেতাকর্মীদের মধ্য থেকে নতুন করে কমিটি গঠন করবে মহানগর বিএনপি। এছাড়া বরিশাল জেলা (উত্তর) ও (দক্ষিণ) এর অধীন মেধাদ উত্তির্ণ পৌরসভা এবং উপজেলার বিএনপির কমিটি গঠন করবে জেলা বিএনপি। ইতিপূর্বে যে সকল উপজেলা ও পৌর বিএনপির কমিটি গঠন করা হয়েছে সেইগুলো ব্যাতীত সকল কমিটিতে স্থান পাবে ত্যাগী ও যোগ্যরা।

সূত্র জানিয়েছে, জাতীয় নির্বাচনসহ সকল নির্বাচনকে সামনে রেখে দলকে শক্তিশালী করতে বরিশাল বিভাগের ছয় জেলা, মহানগর, পৌরসভা, উপজেলা, ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ডের পুনাঙ্গ কমিটি গঠন করতে যাচ্ছে দলটি। গত ১৫ বছর ধরে ঝিমিয়ে পরা বিএনপিকে চাঙা করতে এই উদ্যোগ হাতে নিয়েছে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

একাধিক বিএনপি নেতা বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসররা যেন আর মাথাচাড়া দিয়ে না উঠতে পারে সে জন্য জেলা মহানগর থেকে শুরু করে ওয়ার্ড পর্যায়ের কমিটি গুলোকে শক্তিশালী ভাবে গঠন করা হবে। আগামী জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে নতুন করে ঢেলে সাজাতে হবে।

বরিশাল জেলা (দক্ষিণ) বিএনপির সদস্য সচিব আবুল কালাম শাহিন বলেন, কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী আগামী ৬০ দিনের মধ্যে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতৃবৃন্দের মাধ্যমে উপজেলা ও পৌর বিএনপির কমিটি গঠন করা হবে। এক্ষেত্রে আমরা বরাবর-ই ত্যাগী ও যোগ্যদের স্থান দিয়েছি। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না।

বরিশাল জেলা (উত্তর) বিএনপির আহবায়ক দেওয়ান শহীদুল্লাহ বলেন, দুএকটি উপজেলা ও পৌরসভায় কমিটি গঠনে জটিলতা ছিলো। সে কারণে গঠন করা সম্ভব হয়নি। তবে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে এবার সেগুলো নতুন করে ঢেলে সাজানো সম্ভব হবে। কমিটিতে গত ১৫ বছর স্বৈরাচারী সরকারের হাতে যারা নির্যাতিন ও নিপীরিত হয়েছে তারাই স্থান পাবে।

এ বিষয়ে বরিশাল মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব জিয়া উদ্দিন সিকদার বলেন, স্বৈরাচারী হাসিনা জনগণের যে ভোটাধিকার লুন্ঠন করেছে সেই অধিকার ফিরিয়ে দিতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে দ্রুত মহানগরীর সকল ওয়ার্ডের কমিটি গঠন করা হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সাথে আলাপ করে সম্মেলনের দিনক্ষণ নির্ধারণ করা হবে। আর দল গঠনের ক্ষেত্রে ত্যাগী, যোগ্য এবং হামলা মামলার শিকার নেতাদের মূল্যায়ন করা হবে।