পিরোজপুরে ৩১ কোটি টাকার মাল্টা উৎপাদনের সম্ভাবনা

সেপ্টেম্বর ১৩ ২০২৫, ১৯:০৪

পিরোজপুর প্রতিনিধি : পিরোজপুরে মাল্টার বাম্পার ফলনে আশায় বুক বেঁধেছেন জেলার চাষিরা। কৃষি বিভাগের আশা, এ বছর জেলায় প্রায় ৩১ কোটি টাকার উৎপাদন হবে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর জেলার বিভিন্ন উপজেলায় মোট ৪৩০ হেক্টর জমিতে মাল্টার চাষ হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মাল্টা চাষ হয়েছে সদর ও নাজিরপুর উপজেলায়।

এ বছর ছয় হাজার ২০০ মেট্রিক টন মাল্টা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এখানে চাষ করা হয় বারি মাল্টা ১, যা স্থানীয়ভাবে পরিচিত পয়সা মাল্টা নামে। ফলটি দেখতে সবুজ। তবে পরিপক্ব অবস্থায় কিছুদিন রেখে দিলে তা কমলা রং ধারণ করে।

বর্তমানে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার কৃষক সরাসরি মাল্টা চাষের সঙ্গে জড়িত।
পিরোজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ভারপ্রাপ্ত) উপপরিচালক মো. রেজাউল হাসান বলেন, এ বছর ৪৩০ হেক্টর জমিতে মাল্টার আবাদ হয়েছে এবং উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ছয় হাজার ২০০ মেট্রিক টন। আশা করা যায় সেখানে উন্নীত হতে পারব। তিনি বলেন, পিরোজপুরের আবহাওয়া ও মাটির গুণাগুণ মাল্টা চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী।

কৃষকদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। রেজাউল হাসান জানান, এরই মধ্যে মাল্টা সংগ্রহ শুরু হয়েছে। সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে মাল্টা সংগ্রহ শুরু হয়েছে এবং বাজারে পাওয়া যাচ্ছে পিরোজপুরের মাল্টা।

পিরোজপুর সদর ও নাজিরপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, গাছ থেকে মাল্টা আহরণ, বাছাই এবং প্যাকেট করার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে চাষি ও ব্যবসায়ীরা। নাজিরপুরের দক্ষিণ জয়পুর গ্রামের চাষি অনুপ কুমার সিকদার বলেন, শখের বশে আমার মাল্টা চাষ করা।

আমার পাঁচ বিঘা জমির একটি মাল্টা বাগান রয়েছে। প্রতিটি গাছ থেকেই এবার ভালো ফলন পাওয়া যাচ্ছে। গত বছর একটি গাছ থেকে দুই থেকে তিন মণের বেশি মাল্টা পাওয়া যায়নি। একই গাছ থেকে এ বছর চার থেকে ছয় মণ মাল্টা পাওয়া যাচ্ছে। তবে ফলন ভালো পেলেও বাজারে মাল্টার দাম কম হওয়ায় আশানুরূপ লাভ হচ্ছে না বলে জানান তিনি। দাম গত বছরের তুলনায় কম। তবে, ফলন ভালো হওয়ায় দাম নিয়ে খুব একটা চিন্তিত নন তিনি।

পিরোজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ভারপ্রাপ্ত) উপপরিচালক মো. রেজাউল হাসান বলেন, ক্ষণস্থায়ী ফলনের জন্য মাল্টার প্রতি সবার আগ্রহ থাকে। আর পিরোজপুরে আগস্টের শেষের দিকে মাল্টা পরিপক্ব হতে শুরু হয়েছে। এ মাল্টা পাওয়া যায় সেপ্টেম্বরের শুরু থেকে নভেম্বর শেষ পর্যন্ত। এক সময় শুধু শখের বশে মাল্টা উৎপাদন হলেও, চাহিদা বাড়ায় এখন পিরোজপুরের বিভিন্ন অঞ্চলে মাল্টা চাষ অনেক বেড়েছে। এতে মাল্টা চাষিরা বাণিজ্যিকভাবে সফল হচ্ছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পিরোজপুরে উৎপাদিত মাল্টার পুষ্টি ও গুণগত মান আমদানি করা মাল্টার চেয়েও ভালো। এ ছাড়া আবহাওয়া ও মাটির গুণাগুণ অনুকূলে থাকায় কৃষিনির্ভর এ জেলায় রয়েছে মাল্টা চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা।

এ ব্যাপারে পিরোজপুর কৃষি বিপনন কর্মকর্তা (দায়িত্বপ্রাপ্ত) আব্দুল মান্নান হাওলাদার বলেন, সারা দেশে মৌসুমি ফলের নির্দিষ্ট কোনো বাজার নেই। এই ফল আড়তে বিক্রি হয়। বেশিরভাগ চাষি গাছে ফুল এলেই গাছ বিক্রি করে দেয়। এই ফল শহরে বিক্রির জন্য ফড়িয়া, মধ্যস্বত্বভোগীর দরকার হয়। কারণ একজন চাষি সরাসরি আড়তে ফল বিক্রি করতে পারেন না।