বরিশাল সোনালী ব্যাংকে চলছে বদলি ও লোন বাণিজ্য

স্টাফ রিপোর্টার : বরিশালে সোনালী ব্যাংক পিএলসির জিএম অফিসে চলছে রমরমা বদলী বাণিজ্য। তাছাড়া বিশেষ সুবিধার বিনিময়ে নিয়ম বহির্ভূতভাবে লোন পাশ করানো সহ নানা উপায়ে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি সিন্ডিকেট। এসব সিন্ডিকেট সদস্যরা সরাসরি ব্যাংকের জিএম গোপাল চন্দ্র গোলদারের আশির্বাদপুষ্ট হওয়ায় তারা এখন অনেকটাই অপ্রতিরোধ্য।
জানা গেছে, সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার ও বঙ্গবন্ধু পরিষদের সহ সভাপতি দেবাশিষ চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। তারা জিএম অফিসের আওতায় বিভিন্ন ভালো ভালো জায়গায় নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের পোষ্টিং করান। সিন্ডিকেটের সুপারিশ আসলে তারা বোঝেন যে তাদের নির্ধারিত উৎকোচ পরিশোধ হয়েছে। তখন আর বাধা নেই। এই চক্রের অন্যান্য সদস্যরা হলেন বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি মাইনুল ইসলাম, সালমা নাছরিন, মাসুদ পারভেজ, ইফতেখার মাহমুদ সোহেল, অসীম ও অমল।
চক্রের হাতে যাদের পোস্টিং হয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, প্রনয় কর্মকার( বরিশাল করপোরেট), সরবানী দাশ ( সিএন্ডবি রোড), বাপ্পি কুমার (সিএন্ডবি রোড), উজ্জল (উজিরপুর), সুজন সাহা (ক্যাডেট কলেজ), দেবশিষ চৌধুরী (জিএম অফিস), বিকাশ (বিশ্ববিদ্যালয় শাখা), মনদ্বীপ ব্যাপারী (গৌরনদী ম্যানেজার)।
এদিকে এই সিন্ডিকেটের কাজে কেউ বাধা হলে তাকে নানা ধরনের হয়রানীর শিকার হতে হয়। ফেসবুকে ফ্যাসিষ্টের শাস্তি চেয়ে পোস্ট দেওয়ায় সিনিয়র অফিসার শোয়েব চৌধুরীকে কড়াভাবে শাসিয়েছেন এসপিও দেবাশিষ চৌধুরী। তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসবে। তখন এসব পোস্টদাতারা যাবে কোথায়? যারা যারা জিয়া পরিষদে যুক্ত হয়েছে তাদের সবাইকে দেখে নেওয়া হবে।
এমন অভিযোগ করে শোয়েব চৌধুরী আরো বলেন, আমি ফ্যাসিস্টের বিচার চেয়ে পোস্ট দেওয়ায় আমার সাথে চরম খারাপ আচরণ করেছেন এসপিও দেবাশিষ চৌধুরী। এমনকি জিয়া পরিষদের সকলকে শায়েস্তা করার কথাও বলেছেন তিনি। বরিশাল সোনালী ব্যাংকের অফিসগুলোতে আওয়ামী সমর্থকরা এখনো একক আধিপত্য চালাচ্ছে।
সোনালী ব্যাংকের একধিক স্টাফ জানিয়েছেন, সোনালী ব্যাংক বনাম বাংলাদেশ ব্যাংক একটি ক্রিকেট খেলায় বাংলাদেশ ব্যাংকের এক উপ পরিচালকের সাথে ব্যাপক ঝামেলা করে সোনালী ব্যাংকের ভাবমূর্তি নস্ট করেছে দেবাশিষ চৌধুরী।
তিনি অফিসে আসার কোন সিডিউল নাই, যখন খুসি আসেন, আবার যখন খুসি চলে যান। নগরীর কালীবাড়ি রোডে বাসা থাকায় গত ১৩ বছর তৎকালীন মেয়র সাদেক আব্দুল্লাহর ঘনিষ্ঠজন হিসাবে পরিচয় দিতেন। নগরীর সাগরদী শাখা, সিএন্ডবি রোড শাখা, খানপুরা শাখা, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ম্যানেজার থাকা অবস্থায় লোন বিতরনে করেছেন নানা অনিয়ম।
এই ফ্যাসিস্ট দেবাশিষ চৌধুরী জিএম গোপালের নির্দেশে বর্তমান সময়ে ব্যাংকের জাতীয়তাবাদী আদর্শের বিশ্বাসীদেরকে ডায়রেক্ট থ্রেট দিয়ে বলেছেন, জিয়া পরিষদ করে লাভ হবে, আপনি কি নিশ্চিত যে বিএনপি ক্ষমতায় আসবে? আসবে না, ভবিষ্যতে জিয়া পরিষদের সকলে কে দেখে নেওয়া হবে।
এদিকে জিএম অফিস, প্রিন্সিপাল অফিস ইস্ট এবং প্রিন্সিপাল অফিস ওয়েস্ট সহ শহর অঞ্চলের শাখা গুলোতে দীর্ঘ ১০ বছর যাবত চাকরী করছে এই চক্রের অনুসারী কিছু কর্মকর্তা। তাদেরকে জামাই আদরে এসব শাখাগুলো দীর্ঘ বছর রেখেছে এই সিন্ডিকেট।
এর মধ্যে মারুফ মোরশেদ (কলেজ রোড), সুমন দাশ, আব্দুলাহ আল জাবের, দীপান্বিতা মিত্র, পিনাকী প্রসাদ রয় (সিএন্ড বি রোড), আসাদুজ্জামান (সাগরদী শাখা), জাহিদ হাসান (বরিশাল করপোরেট), অমল চন্দ্র (বরিশাল করপোরেট), সাইদুর রহমান রনি (বরিশাল করপোরেট), কাজী মনির (বরিশাল করপোরেট), উজ্জল দেবনাথ (প্রিন্সিপাল অফিস ওয়েস্ট), জাহিদ (প্রিন্সিপাল অফিস ওয়েস্ট), হান্নান হোসেন( প্রিন্সিপাল অফিস৷ ইস্ট), শর্মিষ্ঠা ধর (জিএম অফিস), বিপুল পাল (জিএম অফিস), নিজামুল কবির (জিএম অফিস), মেহেদী হাসান (জিএম অফিস), আব্দুল্লাহ আল মামুন মুরাদ (চরামদ্দী ম্যানেজার), মোল্লা মোঃ আসাদুজ্জামান (চক বাজার)।
তাছাড়া পটুয়াখালীর বিশ্বজিত বরগুনার আমতলী শাখার ম্যানেজার থাকা কালীন সময়ে দুর্নীতির অভিযোগে বাগেরহাট পিওতে হেড অফিস থেকে বদলী করা হয়। কিন্তু বর্তমান জিএম গোপাল চন্দ্র অল্পদিনের মধ্যেই বিশ্বজিতকে পটুয়াখালী পিওতে প্রাইস পোস্টিং দেন।
এ ব্যাপারে এসপিও দেবাশিষ চৌধুরী বলেন, আমি জিএম অফিসে লাইন ম্যানেজমেন্ট এর দায়িত্বে কাজ করি। সে কারনে বদলীগুলো উর্ধতনের নির্দেশমতই আমি করে থাকি। এখানে কোন দুর্নীতি স্বজনপ্রীতির সুযোগ নেই। তাছাড়া জিয়া পরিষদের কাউকে আমি হুমকি দেইনি। বঙ্গবন্ধু পরিষদের সহ সভাপতি হিসেবে কমিটিতে আমার কোন স্বাক্ষর ছিলনা। তবে কিছু ব্যক্তিদের ১০ বছর ধরে একই জায়গায় পোস্টিং থাকার বিষয়ে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারননি।
বরিশাল সোনালী ব্যাংক পিএলসি’র জিএম গোপাল চন্দ্র গোলদার বলেন, বদলীগুলো ব্যাংকের নিয়মানুযায়ী হয়ে থাকে। এখানে দুর্নীতির কোন সুযোগ নেই। দুই একজন দীর্ঘ সময় একই কর্মস্থলে আছেন সেটার কিছু ব্যাখ্যা আছে। তাছাড়া দেবাশিষ চৌধুরী জিয়া পরিষদকে কটাক্ষ করেছেন কিনা তা আমার জানা নেই।