ছাগলের খামারে বদলে গেছে মনোয়ারার জীবন

জুলাই ০৯ ২০২৫, ১৮:৫৯

ভোলা প্রতিনিধি : স্বামীর আয়ে চলছিল না মনোয়ারা বেগমের সংসার। অল্প আয়ে ৩ ছেলে ও ১ মেয়ে নিয়ে বিপাকে পড়েছিলেন। তখন থেকে বিকল্প আয়ের কথা ভাবতে থাকেন। পরে একটি ছাগল দিয়ে শুরু করেন খামার। তখন জানতে না, ওই ছাগলই আর্থিক স্বচ্ছলতার পাশাপাশি পরিবর্তন করে দেবে নিজের ভাগ্য। ভোলা সদর উপজেলার ধনিয়া ইউনিয়নের শাজাহান তালুকদারের বাড়ির মো. জাহাঙ্গীর আলমের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম ছাগলের খামারের আয় দিয়ে করেছেন গরু, হাঁস-মুরগি ও কবুতরের খামার।

সরেজমিনে কথা হয় মনোয়ারা বেগমের সঙ্গে। তখন তিনি খামারে ঘাস খাওয়াচ্ছেন ছাগলগুলোকে। সহযোগিতা করছেন বড় ছেলে মো. সুমনের স্ত্রী সালমা বেগম। শাশুড়ি ও ছেলের বউ হাসি-খুশি মনেই কাজ করছেন। মনোয়ারা বেগমের পরিশ্রম দেখে মনে হবে না, তার বয়স ৫০-এর বেশি। তার বিশ্বাস, পরিশ্রম করতে পারলেই সফল হওয়া সহজ।

মনোয়ারা বেগম জানান, কখনো কৃষিকাজ আবার কখনো মাছ বিক্রি করে সংসার চালাতেন স্বামী। কষ্ট করেই চলছিল তাদের সংসার। ছেলে-মেয়েও বড় হয়ে উঠছে। মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার চিন্তা মাথায়। স্বামীর আয়ের পাশে নিজেও কিছু একটা করে বাড়তি আয়ের চিন্তা করছেন কয়েক বছর ধরে। পরে ১৫ বছর আগে তার ভাই আক্তার হোসেনের কাছ থেকে একটি ছাগল কিনে আনেন। কয়েক মাসের মধ্যে ওই ছাগল বাচ্চা দেয় দুটি। কিছুদিন পর বাচ্চা বড় হলে বিক্রি করে দেন। আবার ছাগল বাচ্চা দেয়। আবারও কিছুটা বড় করে বিক্রি করে দেন। এভাবেই ছাগল বিক্রির টাকা জমাতে থাকেন। ওই টাকায় মেয়ের বিয়ে দেন। এভাবেই চলতে থাকে মনোয়ারা বেগমের ছাগলের খামার।

তিনি আরও জানান, প্রায় ৮-৯ বছর আগে বড় ছেলে সুমনকে বিয়ে করান। ছেলের বউ সালমা বেগমের পরামর্শে প্রায় ২ বছরের মতো ছাগলের বাচ্চা বিক্রি করেন না। বিক্রি না করায় তার খামারে ১০-১৫ টির মতো ছাগল হয়। এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি। গড়ে তোলেন বড় পরিসরে ছাগলের খামার। প্রতি ৬ মাসে ছাগল বিক্রি করে বেশ আয় করতে থাকেন। পরে ওই ছাগলের আয় দিয়ে কেনেন একটি গরু। ওই গরু থেকে হয়েছে ৪টি গরু। বর্তমানে হাঁস-মুরগি ও কবুতরের খামারও করেছেন।

মনোয়ারা বেগম জানান, ছাগল, গরু, হাঁস, মুরগি ও কবুতরের খামারে তাকে সহযোগিতা করেন বড় ছেলের বউ সালমা বেগম। ছাগল ও গরুর জন্য ঘাস কেটে আনেন ছোট ছেলে মো. নাঈম। বর্তমানে খামারে ৯টি ছাগল আছে। প্রতি ৬ মাস পর পর তিনি ছাগল বিক্রি করে প্রায় ৫০-৬০ হাজার টাকা, আবার কখনো ৮০-৯০ হাজার টাকা আয় করেন। ওই টাকা দিয়েই গরু, হাঁস-মুরগি ও কবুতরের খামার করেছেন। গত ২ বছরে গরু বিক্রি করে আয় করেছেন প্রায় ১ লাখ টাকা। হাঁস-মুরগি ও কবুতরের খামার থেকে গত ১ বছরে আয় হয়েছে প্রায় ৯০ হাজার টাকা।

মনোয়ারার ছেলের বউ সালমা বেগম জানান, তার বিয়ের পর শ্বশুরবাড়িতে এসে দেখেন শাশুড়ি ছাগল পালন করছেন। তখন তিনি তাকে বলেন, ছাগল বিক্রি না করলে ১০-১২টি হলে খামার বড় হবে আর আয়ও বাড়বে। তাকে খামারের সব ধরনের সহযোগিতারও আশ্বাস দেন। এরপরই খামার বড় হতে থাকে। এখন তার শাশুড়ি তুলাতুলি গ্রামের একজন সফল নারী। সংসারের কাজের ফাঁকে তিনি ও শাশুড়ি মিলে খামারে কাজ করেন। দুজন মিলেমিশে কাজ করেন। কোনো কষ্ট মনে হয় না তার।

মনোয়ারা বেগমের ছোট ছেলে মো. নাঈম জানান, তিনি ডিগ্রিতে পড়াশোনা করেন। পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে বিলে গিয়ে ঘাস কেটে আনেন। ওই ঘাস ছাগল ও গরুকে খাওয়ান তার মা ও ভাবি। এ ছাড়া তার মায়ের পরিশ্রমের কারণে তাদের সংসারে আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরেছে। তাদের ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছে বলেও জানান তিনি।

ভোলা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘মনোয়ারা বেগমের মতো গ্রামের অনেক নারী তাদের সংসারের কাজের ফাঁকে গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগি ও কবুতরের খামার করছেন। এরমধ্যে বেশিরভাগ নারীই শতভাগ সফল হচ্ছেন। নারীদের খামারে গিয়ে তাদের বিভিন্ন পরামর্শ ও প্রাণীর চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। ভোলার নারীরা আগের চেয়ে এখন বেশি ছাগল, গরু, হাঁস, মুরগি ও কবুতর পালনে ঝুঁকছেন। আমরাও তাদের সব ধরনের পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দিচ্ছি।’