কাজে ফিরেছেন বিসিসি’র পরিচ্ছন্নকর্মীরা

স্টাফ রিপোর্টার !! বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) পরিচ্ছন্নকর্মীরা কাজে যোগ দিয়েছেন। বিসিসি কর্তৃপক্ষ ছাঁটাইকৃত কর্মীদের দাবী মেনে নেয়ায় তারা সোমবার বিকেল ৩টার দিকে কাজে যোগ দিয়েছেন। এর আগে রবিবার থেকে শ্রমিকরা নগর ভবন ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেছেন। পাশাপাশি তারা শহরের ময়লা-অবর্জনা পরিস্কার বন্ধ রেখেছেন। বিসিসি কর্তৃপক্ষ বলছেন, ছাঁটাইকৃত শ্রমিকদের মধ্যে থেকে ৩০ শতাংশ শ্রমিকের স্বজনদের অস্থায়ী ভিত্তিতে দৈনিক শ্রমিক হিসেবে চাকুরি দেয়া হবে। অপর শ্রমিকদের এককালিন টাকা দেয়া হবে।
বরিশাল নগরীতে দুদিন ধরে ময়লা-আবর্জনা অপসারণ বন্ধ করে রেখেছেন সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা। বিভিন্ন সড়কের পাশে বর্জ্যের স্তূপ থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এমনকি বসতবাড়ি থেকেও রবিবার রাত পর থেকে আর পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা ময়লা–আবর্জনা নিচ্ছেন না। এতে অস্বস্তিতে পড়েছেন নগরবাসী। বিসিসির ১৬০ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মীকে ছাঁটাই করার প্রতিবাদে তারা ময়লা অপসারণ বন্ধ রেখেছিলে। পাশাপাশি তারা সোমবার নগর ভবনের সামনে বিক্ষোভ করেছিলেন।
নগীরর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা জানান, বরিশাল নগরীর প্রতিদিনকার বর্জ্য সাধারণত রাতের মধ্যেই ট্রাকে করে নিয়ে কাউনিয়া এলাকার পুরানপাড়া ডাম্পিং স্টেশনে নেওয়া হয়। সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা এই কাজটি করেন। কিন্তু রবিবার রাত থেকে নগরীর প্রতিটি সড়কে স্তূপাকারে ময়লা-আবর্জনা পড়ে আছে।
সোমবার সকালে নগরীর কাঠপট্টি, বটতলা, নবগ্রাম রোড, বিএম কলেজের সামনের এলাকা, সিঅ্যান্ডবি রোডসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে সড়কের পাশে বর্জ্যের স্তূপ দেখা যায়। সিঅ্যান্ডবি রোডটি ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের অংশ। এই মহাসড়কের দুই পাশে আবর্জনার স্তূপ থাকায় মানুষের চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে।
বিএম কলেজ রোড এলাকার বাসিন্দা আল মামুন হাওলাদার বলেন, বিএম কলেজের সামনে প্রফেসর গলির মুখে দুদিন ধরে বর্জ্যের স্তূপ। ময়লার দূষিত পানি ছড়াচ্ছে। মানুষের পায়ে পায়ে ছড়িয়ে পড়ছে ঘরে ঘরে। দুর্গন্ধে এলাকায় টেকা দায় হয়ে পড়েছে। এই সড়কে হাঁটাচলাও কষ্টকর।
অন্যদিকে বাসাবাড়ি থেকে ময়লা-আবর্জনা সংগ্রহের কাজ বন্ধ রেখেছেন পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা। নগরীর, বটতলা, চৌমাথা, আলেকান্দা, ভাটিখানা, গির্জা মহল্লা এলাকার বেশ কয়েকজন বাসিন্দা জানান, প্রতিদিন পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা বাসায় এসে ময়লা নিয়ে যেত, রবিবার থেকে তা বন্ধ। এরপর বাধ্য হয়ে রাস্তায় ময়লা ফেলে এসেছেন অনেকে।
বটতলা রাজুমিয়ার পুল এলাকার মাসুক কামাল বলেন, ভাড়া বাড়ির পাঁচতলায় থাকি। সিটি করপোরেশনের লোকজন বাসায় এসে ময়লা নিয়ে যায়। এ জন্য তাঁরা পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের আলাদাভাবে মাসিক পারিশ্রমিক হিসেবে ১০০টাকা দেন। কিন্তু হঠাৎ ময়লা না নেওয়ায় তাঁরা ভোগান্তিতে পড়েছেন। রাস্তায় নামলেও দুর্গন্ধে শ্বাস বন্ধ হয়ে আসে।
সিটি করপোরেশন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি হোসেন ঢালি জানান, গত ১ জানুয়ারি ১৬০ শ্রমিককে আকস্মিক ছাঁটাই করা হয়েছে। তার আগে কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের কারণ দর্শানো কিংবা কোনো ধরনের লিখিত নোটিশ দেয়নি। শুধু মাত্র মৌখিক নির্দেশে আমাদেরকে ছাটাই করা হয়েছে। যা সম্পূর্ণ অন্যায় ও বেআইনি। তাই এই ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে শ্রমিকরা ময়লা অপসারণ বন্ধ রেখেছেন। সোমবার দুপুর পর্যন্ত শ্রমিকরা নগর ভবনের সামনে বিক্ষোভ করেন।
পাশাপাশি শ্রমিকদের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সোমবার দুপুরের দিকে সিটি করপোরেশনের প্রশাসকের দায়িত্বে থাকা বিভাগীয় কমিশনার রায়হান কাওছার সভাপতিত্বে বৈঠক হয়েছে। সেখানে সিটি করপোরেশনের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা অংশ গ্রহন করেন। সেই সভায় শ্রমিকদের জানানো হয়েছে, ষাট ঊর্ধ্ব শ্রমিকদেরকে ছাটাই করা হয়েছে। ছাটাইকৃত ৩০ শতাংশ শ্রমিকের স্বজনরা চাকুরি পাবেন। আর যারা চাকুরি পাবেন না তাদেরকে এককালিন টাকা দেয়া হবে। তবে জনপ্রতি কত টাকা দেয়া হবে তা সভায় সিদ্ধান্ত হয়নি।
সিটি করপোরেশনের সহকারি পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা ইউসুফ আলী বলেন, নগরীতে প্রতিদিন গড়ে ২০০ টন ময়লা-আবর্জনা অপসারণে ৪৩২ কর্মী কাজ করেন। এর বাইরে আরো ৩২৩জন ঝাড়–দার রয়েছেন। সম্প্রতি ৬২জন অস্থায়ী শ্রমিক এবং ৪০জন ঝাড়–দারকে ছাঁটাই করা হয়েছে। তারাই রবিবার থেকে ময়লা অপসারনে বাঁধা দিয়ে আসছেন। তাই রবিবার থেকে ময়লা অপসারণ বন্ধ ছিল। তবে বিভাগীয় কমিশনারের কক্ষে অনুষ্টিত সভার পর শ্রমিকরা বিকালের দিকে কাজে যোগ দিয়েছেন।
সিটি করপোরেশন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল বারি সাংবাদিকদের বলেন, যাদের বয়স ৬০ পেরিয়েছে, তাদেরকে নিয়ম মেনেই ছাঁটাই করা হয়েছে। তারা আর দায়িত্বে ফিছেন না। তবে মানবিক দিক বিবেচানায় রেখে ৩০ শতাংশ শ্রমিকদের স্বজনদের নতুন ভাবে দৈনিক শ্রমিক হিসেবে কাজে নেয়া হবে। এছাড়া অপর শ্রমিকদেরকে এককালিক টাকা দেয়া হবে। এই সিদ্ধান্ত শ্রমিকরা মেনে নিয়ে কাজে যোগ দিয়েছেন।