এক বছরে ৫১৩৯ মামলা, নিষ্পত্তি ৪৬৮৯, ক্ষতিপূরণ ৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা
ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় গ্রাম আদালতের নজীর স্থাপন

ফাহিম ফিরোজ ॥ দিনে দিনে ন্যায় বিচারের আস্থার প্রতীক হচ্ছে গ্রাম আদালত। ফলে গ্রাম আদালতের দিকে ঝুঁকছেন বিচার প্রার্থীরা। গ্রাম আদালতের জরিমানার ক্ষমতা বাড়িয়ে সর্বোচ্চ ৩ লাখ টাকা করায় আরও গতি ফিরেছে এই বিচার ব্যবস্থায়। এর আগে গ্রাম আদালত সর্বোচ্চ ৭৫ হাজার টাকা জরিমানা করতে পারতো। গতবছরের মার্চ থেকে এই নতুন আইন কার্যকরের পর গ্রাম আদালতের ঝুঁকছেন দারিদ্র মানুষ। গ্রাম আদালতের মাধ্যমে ন্যায় বিচারের ফলে দিনদিন মামলা দায়েরের পাশাপাশি নিস্পত্তির সংখ্যাও বাড়ছে। একই সঙ্গে গ্রাম আদালতের ওপর আস্থা বাড়ছে মানুষের।
বরিশাল বিভাগের অধিকাংশ ইউনিয়নের আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছে এ গ্রাম আদালত। গত এক বছরে ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় এ আদালতের কার্যক্রমে গতি ফিরেছে পুরোদমে।
এই সময়ে বরিশাল বিভাগের ২৩৯ টি গ্রাম আদালতে ৫ হাজার ১৩৯ মামলা দায়ের হয়েছে। এর মধ্যে ৪ হাজার ৬৮৯ টি ঘটনা নিষ্পত্তি করা হয়েছে। সে হিসেবে নিস্পত্তির হার প্রায় ৯২ শতাংশ। একই সঙ্গে ৩ হাজার ৩২০টি মামলার আদেশে ৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
‘গ্রাম আদালত সক্রিয়করণে স্থানীয় প্রশাসনের ভূমিকা ও করণীয়’ শীর্ষক বরিশাল বিভাগীয় সন্মেলনে এমন তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। সন্মেলনে ৮৪জন ইউপি চেয়ারম্যান অংশ গ্রহন করেন। তারা গ্রাম আদালত পরিচালনার বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার কথা তুলে ধরেন।
গ্রাম আদালত আইন অনুযায়ী, ছোটখাটো ফৌজদারি ও দেওয়ানি বিরোধ স্থানীয়ভাবে মীমাংসার জন্য ইউনিয়ন পরিষদে গ্রাম আদালত গঠিত হয়। এই আদালত সর্বোচ্চ ৩ লাখ টাকা মূল্যমানের বিরোধ নিষ্পত্তি করতে পারেন। চুরি, ঝগড়া, প্রতারণা, ভয়ভীতি দেখানো, নারী নির্যাতন, পাওনা টাকা আদায়, গবাদিপশুর ক্ষতির মতো বিরোধের নিষ্পত্তি গ্রাম আদালত করতে পারেন।
গ্রাম আদালতে মামলা করে গত ২২ জুলাই টাকা ফেরত পেয়েছেন বরগুনা সদর উপজেলার ঢালুয়া ইউনিয়নের ডালভাঙ্গা গ্রামের সেতারা বেগম। তিনি গত বছরের শুরুতে ২৫ হাজার টাকা ধার দিয়েছিলেন একই গ্রামের মনির হোসেনকে। কিন্তু টাকা ফেরত না দিয়ে সময় ক্ষেপন করেন। এ নিয়ে সেতারা বেগম ওই বছরের ১৫ জুলাই মনিরের বিরুদ্ধে গ্রাম আদালতে মামলা করেন। আদালতের রায়ে তিনি টাকা ফিরে পেয়েছেন।
সেতারা বেগম বলেন, কোর্টে মামলা করতে গেলে সময় লাগত, টাকা খরচ হতো। তাই চেয়ারম্যানের এখানে মামলা করি। মামলা দায়েরের মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে চেয়ারম্যান টাকা তুলে দিসে। গৌরনদীর আরেক সুবিধাভোগী আলো রানী ঘোষ বলেন, তাঁরা দরিদ্র মানুষ। গ্রাম আদালতের মাধ্যমে ন্যায়বিচার পেয়ে তাঁরা খুশি। পুলিশ, আদালতের চক্কর ও অর্থ অপচয় থেকে মুক্তি পেয়েছেন।
একই কথা জানালেন ঝালকাঠির নবগ্রামের রিমন হাওলাদার। তিনি বলেন, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান বিভিন্ন বিরোধ নিরসন করেন। মানুষ আদালতে গেলে নানা ধরণের হয়রানীর শিকার হন। কিন্তু স্থানীয় পর্যায়ে এই বিরোধ সমাধান করে গ্রাম আদালত।
এদিকে দ্রুত সময়ে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় গ্রাম আদালত এক অন্যন্য নজীর স্থাপন করেছে। ছোট খাটো অপরাধ কিংবা বিরোধ নিরসনে মূখ্য ভূমিকা পালন করছে গ্রাম আদালত। গ্রাম আদালতে দেয়া অভিযোগ স্থানীয় স্বাক্ষী প্রমাণের ভিত্তিতে মিমাংসা করা হয়। তাই গ্রাম আদালত এখন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।