দেড় দশকে ডুবে যাওয়া ২৭৫ নৌ যান উদ্ধার করা যায়নি

স্টাফ রিপোর্টার : নৌ দুর্ঘটনা ঘটলে তা উদ্ধারে পর্যাপ্ত সক্ষমতা নেই। সরকারি তথ্যে, গত ১৫ বছরে পাঁচ শতাধিক নৌযান ডুবিতে অর্ধেক-ই উদ্ধার করা যায়নি। টাকার বিনিময়ে চালকদের সনদ বিক্রি হয় বলেও অভিযোগ তদারকি সংস্থার বিরুদ্ধে। নামে মাত্র আধুনিকতার বেড়াজালে দুর্ঘটনা কমছে না বলে মত পর্যবেক্ষকদের। যদিও উদ্ধার তৎপরতা বাড়াতে বেশ কিছু প্রকল্প নেয়া হয়েছে বলে দাবি করেছে বিআইডব্লিউটিএ।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ- বিআইডব্লিউটিএর তথ্যে, গত ১৫ বছরে ৫শ ৫ টি নৌযান ডুবির ঘটনা ঘটেছে। সরকারি ও বেসরকারি সহায়তায় এর মধ্যে ২শ ৩৪টিই উদ্ধার করা গেলেও অর্ধেকরও বেশি, অর্থাৎ ২শ৭৫টি নৌযান ই উদ্ধার সম্ভব হয়নি। প্রশ্ন উঠেছে, দেশে নৌ দুর্ঘটনা ঘটলে কতটা সক্ষম বাংলাদেশ?
আলাপে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন বরিশাল জেলার সভাপতি কাজী আল মামুন অভিযোগ করে বলেন, গত ১৬ বছর আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নৌ সেক্টর দুর্নীতির আখড়ায় পরিনত হয়েছিলো। প্রতি বছর শত শত নৌ দুর্ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু তা রোধে কিংবা ডুবে যাওয়া নৌযান উদ্ধারে কাঙ্ক্ষিত সক্ষমতা বৃদ্ধি করেনি।
জানা যায়, নৌযান ডুবলে দেশে ৪টি উদ্ধারকারী জাহাজ রুস্তম, হামজা, প্রত্যয় ও নির্ভীক রয়েছে। সব জাহাজ মিলে ওজন তোলার স্বক্ষমতা রয়েছে মাত্র ৬শ ২০ টন। এর বিপরীতে ঢাকা-বরিশাল নদীপথে যেসব লঞ্চ চলে তার প্রতিটির ওজন গড়ে প্রায় তিন হাজার টন। নৌযান ডুবে গেলে তা উদ্ধার তৎপরতায় পূর্ণ সক্ষমতা না থাকার পাশাপাশি অভিযোগ উঠেছে লঞ্চ চালকদের দক্ষতা নিয়ে। আছে, আধুনিক প্রযুক্তির অভাবে নৌযান পর্যবেক্ষণও।
বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন বরিশাল বিভাগের সভাপতি শেখ আবুল হাসেম অভিযোগ করেন দেশে টাকার বিনিময়ে জাহাজের চালকদের সনদ বিক্রি হয়। দক্ষ চালক তৈরি না হবার এটিই বড় কারণ। চালকদের অদক্ষতায় নৌ দুর্ঘটনা কমে না।
নৌপুলিশ বরিশালের পুলিশ সুপার এস এম নাজমুল হক জানান, আধুনিক প্রযুক্তির অভাবে নৌ দুর্ঘটনা ঘটে। তারা চেষ্টা করেন নৌ দুর্ঘটনা ঘটলে তা উদ্ধারে যথাযথ ব্যবস্খা নেবার। কিন্তু অনেক নৌযানের রেজিস্ট্রেশন থাকেনা। জিপিআরএস সিস্টেম যতি পুরোপুরি চালুসহ নৌ পথে ট্রাফিক ব্যবস্থা এবং স্পট ভিত্তিক সিসি টিভি ব্যবস্থা করা সম্ভব হয় তবে নৌপথ আরও সুরক্ষিত হবে বলে মত দেন নৌ পুলিশ সুপার।
বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমডোর আরিফ আহমেদ মোস্তফা জানান, তিনি দায়িত্ব নেবার পর নৌ দুর্ঘটনা রোধ এবং নৌযান উদ্ধার সক্ষমতা বৃদ্ধিতে তিনি উদ্যোগ তিনি নিয়েছেন। ৫শ টন করে ৪টা উদ্ধারকারী জাহাজ কিনতে প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। দুই হাজার টন উত্তোলন সক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান।
বিআইডব্লিউটিএ’র তথ্যমতে, নৌদুর্ঘটনা ঘটলে নৌযান উদ্ধারে কাজ করে ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ, নৌবাহিনীসহ সরকারি অন্তত ২৫টি সংস্থা।