আগাম তরমুজ চাষে সম্ভাবনার হাতছানি

ডিসেম্বর ০৫ ২০২৪, ১৮:১৯

পটুয়াখালী প্রতিনিধি !! একদিকে পাকা আমন ধান কাটায় ব্যস্ত চাষিরা, অন্যদিকে মাঠের এক কোণে বড় হচ্ছে তরমুজের চারা। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে কৃষকরাও জানান দিচ্ছেন পিছিয়ে নেই তাড়াও। দিগন্ত বিস্তৃত মাঠজুড়ে সোনালী রঙে ছেয়ে থাকা পাকা আমন ধান কাটার পরেই কৃষকরা স্বপ্ন বুনবেন ঢোড়াকাটা কালো কিংবা সবুজ রঙের তরমুজে।

তরমুজ চাষের জন্য জমি উপযোগী হতে বিলম্ব হয় শুধু মূল জমিতে আমন ধান থাকায়। তাই আগাম তরমুজ চাষের জন্য কৃষক পলিব্যাগে তরমুজের চারা উৎপাদন করে। তরমুজের উর্বরভূমি খ্যাত পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের কাউখালী চর ও চরমোন্তাজের ৬ নম্বর ওয়ার্ডসহ একাধিক জায়গায় তরমুজের প্রজেক্টের চিত্র একই। মূল জমিতে আমন ধান কাটার পরে জমি ফাঁকা হলে সেখানে শুরু হয় তরমুজ চাষের উৎসব। রোদে জমি শুকানো, কয়েক ধাপে চাষাবাদ, প্রস্তুত জমিতে তরমুজের মাদা (গোলাকার মাটির বেড) তৈরি। প্রস্তুতকৃত এই মাদায় তরমুজের চারা রোপণের আগেই ক্ষেতের পাশে, বাড়ির উঠানে কিংবা মাঠের কোণে সুবিধাজনক জায়গায় পলিব্যাগে লাগানো হয় তরমুজের বীজ। পলিতে লাগানো চারার বয়স যখন এক মাস ছুঁই ছুঁই ঠিক তখনই ২০ থেকে ২৫ দিন বয়সী এ চারা লাগানো হয় প্রস্তুতকৃত মাদায়। যার ফলে ২০ থেকে ২৫ দিন আগে ফলন পাওয়াসহ আগাম তরমুজে চড়া দাম পেয়ে বেশি লাভবান হয়ে থাকেন কৃষকরা। এছাড়াও পলিব্যাগে করা চারা প্রচন্ড রোদ বা বৃষ্টিসহ অনাকাঙ্খিত প্রাকৃতিক দূর্যোগ থেকে রক্ষা করা যায় সহজেই।

সরাসরি ক্ষেতে রোপণ করা চারা মারা গেলে নতুন করে বীজ গজিয়ে চারা পুনঃস্থাপন করা সময়সাপেক্ষ এবং দূরুহ হয়ে পড়ে। কিন্তু পলিব্যাগে করা চারা মূল জমিতে লাগানোর পর কোনো চারা মারা গেলে সেখানে একই বয়সী চারা পুনঃস্থাপন করা অতি সহজ। পলিতে চারা করলে বীজের পরিমাণ কম লাগে। এতে উৎপাদন খরচ কমে যায়। সময় সাশ্রয়ের সাথে খরচ কম হওয়ায় বেশিভাগ তরমুজ চাষিরা এই পদ্ধতিতে ঝুকছেন।

তরমুজ চাষি সোহাগ হাওলাদার বলেন, ‘আগে আমরা তরমুজের আডি (বীজ) মূল জমিতে মাদায় দিতাম (রোপণ) করতাম। ২টা করে বীজ রোপণ করা লাগতো। এতে খরচ হতো দ্বিগুণ হতো কিন্তু এহন (এখন) পলিব্যাগে করায় আমাদের খরচ অর্ধেক কইম্যা (কমে) গেছে। এহন (এখন) বেশি বৃষ্টি বা রোদ হলে তরমুজের চারা মারা যাওয়ার আশঙ্কা কম থাকে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এই বছরে আমরা আগে (আগাম) ফলন পামু (পাবো)। এতে ভালো দাম পাওয়াসহ লাভবান হবেন বলে আশাবাদী অন্য চাষিরাও।’

উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, গত বছর ভালো ফলন হওয়ায় ও বেশি দাম পাওয়ায় চলতি মৌসুমে রাঙ্গাবালী উপজেলায় ৯ থেকে ১০ হাজার হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ হতে পারে বলে আশা করছেন। গত বছর এ উপজেলায় ৫ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছিল।

রাঙ্গাবালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: আসাদুজ্জামান নয়া দিগন্তকে জানান, মূল জমিতে আমন ধান থাকায় তরমুজ চাষের জন্য জমি উপযোগী হতে বিলম্ব হয়। তাই আগাম তরমুজ চাষের জন্য কৃষক পলিব্যাগে তরমুজের চারা উৎপাদন করে। পরবর্তীতে জমি ফাঁকা হলে সেখানে ২০ থেকে ২৫ দিন বয়সী চারা লাগানো হয় ফলে ২০ থেকে ২৫ দিন আগে ফলন পাওয়া যায়। পাশাপাশি প্রচন্ড রোদ বা বৃষ্টি থেকে রক্ষা করতেও পলিতে চারা করা হয়। ফলে কৃষক বড় ধরনের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পায়।