২৪ ঘন্টায় তিন জেলায় ছয় শিশুসহ ১০ জনের লাশ উদ্ধার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বরিশাল বিভাগের তিন জেলায় পৃথক পৃথক ঘটনায় ৬ শিশুসহ ১০ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। গত ২৪ ঘন্টায় ভোলা-বরগুনা ও ঝালকাঠিতে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এতে ১০ জনের প্রণ প্রদীপ নিভে যায়। জানা গেছে, ভোলায় পৃথক পাঁচটি দুর্ঘটনায় চার শিশুসহ ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত পৃথক পুলিশ এ ছয়টি লাশ উদ্ধার করে। এর মধ্যে লালমোহন উপজেলায় তিনটি, চরফ্যাশনে দুটি, আরেকটি লাশ তজুমদ্দিন উপজেলা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। পানিতে ডুবেই মারা গেছে ৩ শিশু, এক যুবক ও আরেক বৃদ্ধ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। আরেক শিশুর গলায় ফাঁস দিয়ে ‘আত্মহত্যা’র খবর পাওয়া গেছে। শনিবার দুপুরে লালমোহন উপজেলার ধলীগৌরনগর ইউনিয়নের চর কালাচাঁদ গ্রামে পুকুরের পানিতে ডুবে দেড় বছর বয়সী নাফিজা আক্তার ও তাঁর চাচাতো ভাই দুই বছর বয়সী মিনহাজ মারা যায়। দুপুরে পরিবারের সবাই ঘরে খাবার খাচ্ছিলেন। এ সময় তাদের অজান্তেই দুই শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। একই উপজেলার পৌরসভা গেইট এলাকায় বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মোটরসাইকেল চাপায় আবুল কালাম নামের ষাটোর্ধ এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়। তিনি পৌর ১২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। লালমোহনের তিনটি মৃত্যুর বিষয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, কোনো অভিযোগ না থাকায় তিনটি লাশই পরিবারের কাছে আইনি প্রক্রিয়ায় হস্তান্তর করা হয়েছে। চরফ্যাশন উপজেলার চরফ্যাশন-দুলারহাট সড়কের বটতলী এলাকায় ট্রলির ধাক্কায় রাসেল (২৮) নামের এক এনজিও কর্মীর মৃত্যু হয়েছে। রাসেল উপজেলার শশীভূষণ থানার জাহানপুর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের আবুল খায়ের হাওলাদারের ছেলে। এ ছাড়া সকাল ৬টার দিকে উপজেলার আবুবক্করপুর ইউনিয়নের চৌমুহনী বাজার এলাকা থেকে আফিয়া নামের ৮ বছর বয়সী এক শিশুর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। শিশুটি ওই এলাকার ফয়সাল আহমেদের মেয়ে। শিশুটির দাদা সিরাজুল ইসলাম জানান, শিশুটির মায়ের সঙ্গে প্রায় ৫ বছর আগে তার বাবার বিচ্ছেদ হয়। এরপর শিশুটি মায়ের সঙ্গেই থাকতো। শুক্রবার রাতে শিশুটি তাঁর মায়ের কাছে ঈদে নতুন জামা চেয়েছিল। মা নতুন জামা কিনে না দেওয়ায় অভিমান করে ঘরের আড়ার সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে পরিবার দাবি করছে। চরফ্যাশন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, শিশু আফিয়া ও এনজিও কর্মী রাসেলের মরদেহ বিনা ময়নাতদন্তে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তজুমদ্দিন উপজেলার শম্ভুপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডে পুকুরের পানিতে ডুবে মুশফিকা নামের দেড় বছর বয়সী আরেকটি শিশু মারা যায়। শিশুটি ওই ওয়ার্ডের সিরাজুল ইসলামের মেয়ে। তজুমদ্দিন থানার ওসি মোহাব্বত আলী খান বলেন, পানিতে ডুবে মারা যাওয়া শিশু মুশফিকার মৃত্যু নিয়ে পরিবারের কোনো অভিযোগ না থাকায় আইনি প্রক্রিয়ায় শিশুটির লাশ তাঁর বাবা-মায়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
ঝালকাঠিতে পৃথক ঘটনায় দুই শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু : ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার বড়কৈবর্তখালী গ্রামের মিরাজ হাওলাদারের ছেলে শনিবার (৩১ মে) হোসেন হাওলাদার (৩) পানিতে ডুবে মৃত্যু বরন করে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মিরাজ হাওলাদারের ছোট ছেলে পরিবারের অগোচরে শনিবার (৩১ মে) কোনো একসময় বাড়ির পিছনের পুকুরে পরে যায়। পরে খোজাখুজি করতে করতে হোসেনকে পুকুর ভাসতে দেখতে পেয়ে তার মা নাজমা চিৎকার করে পানিতে ঝাপিয়ে পরে শিশুটিকে উদ্ধার করে। পরবর্তীতে স্থানীয়রা মিলে রাজাপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করে শিশুটিকে। শিশুটির মৃত্যুতে এলাকায় শোকের মাতম নেমে এসেছে। এদিকে রাজাপুর উপজেলার বড়ইয়া ইউনিয়নের উত্তর উওমপুর গ্রামে নিখোঁজের চারদিন পর মো. হামিদুল ইসলাম হাওলাদার (১০) নামের এক প্রতিবন্ধী শিশুর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহত হামিদুল ওই গ্রামের মো. সাগর হাওলাদারের ছোট ছেলে। রাজাপুর থানা সূত্রে জানা যায়, গত ২৭ মে বিকেল থেকে হামিদুল নিখোঁজ ছিল। পরদিন ২৮ মে তার পরিবার রাজাপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। শনিবার (৩১ মে) দুপুরে স্থানীয় কিশোর শফিকুল ইসলাম তার বন্ধুদের সঙ্গে খালে কলাগাছের ভেলা ভাসাতে গিয়ে খালপাড়ে শিশুটির মরদেহ দেখতে পায়। পরে পুলিশকে খবর দেওয়া হলে তারা ঘটনাস্থলে এসে মরদেহ উদ্ধার করে। রাজাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইসমাইল হোসেন বলেন, “শিশুটির মৃত্যুর ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ না থাকায় ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।”
আমতলীতে বজ্রপাতে কৃষকের মৃত্যু : বরগুনার আমতলী সদর ইউনিয়নের দক্ষিণ পশ্চিম আমতলী গ্রামে বজ্রপাতে বেল্লাল খান (৩২) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হযেছে। বেল্লাল এই গ্রামের মোঃ আতাহার খানের ছেলে। জানা গেছে, আমতলী উপজেলার সদর ইউনিয়নের দক্ষিন পশ্চিম আমজনী গ্রামের বাসিন্দা মো. বেল্লাল খান রবিবার দুপুর পৌনে ১১ টার দিতে নিজের গরুর জন্য ঘাস কাটতে বাড়ির পাশের মাঠে যান। মাঠে ঘাস কাটার সময় আকস্মিক বজ্রপাতে বেল্লাল মাঠের পানির মধ্যে লুটিয়ে পড়ে। দূর থেকে অনা আরেক একজন কৃষক এই ঘটনা দেখতে পেয়ে কাছে এসে দেখেন তার শরীর ঝলসানো এবং অজ্ঞান অবস্থার পানির মধ্যে পরে রয়েছেন। তাৎক্ষনিক তাকে স্বজনদের সহযোগিতার উদ্ধার করে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে টিকিৎিসার জন্য নিয়ে আসেন। আমতলী হাসপাতালের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. চিন্ময় হাওলাদার বলেন, হাসপাতালে আনার আগেই বেল্লালের মৃত্যু হয়েছে।
ছিঁড়ে যাওয়া বৈদ্যুতিক তারে স্পৃষ্ট হয়ে গৃহবধূর মৃত্যু: বরগুনার তালতলীতে ঝড়ে ছিঁড়ে যাওয়া বৈদ্যুতিক তারে বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে মুক্তা আক্তার (১৮) নামের এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার রাত সোয়া ৮ টার সময় উপজেলার ছোটবগী ইউনিয়নের ঠংপাড়া এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত মুক্তা আক্তার ওই এলাকার রাজিব সিকদারের স্ত্রী। জানা যায়, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টিসহ ঝড়ো হাওয়া প্রবাহিত হয়। ঝড়ের তান্ডবে তালতলী উপজেলার ছোটবগী ইউনিয়নের ঠংপাড়া গ্রামের রাজিব সিকদারের বাড়িতে একটি বৈদ্যুতিক সংযোগের তার ছিড়ে মাটিতে পড়ে ছিল। কিছু না বুঝেই গৃহকর্তা রাজিব সিকদারের স্ত্রী মুক্তা আক্তার (১৮) তারটি ঘুছিয়ে রাখতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পরেন। এঘটনা দেখতে পেয়ে স্বজনরা তাকে উদ্ধার করে তালতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তালতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. আইরিন আলম বলেন, মুক্তা আক্তারকে হাসপাতালে নিয়ে আসার আগেই তার মৃত হয়েছে। নিহত মুক্তা আক্তারের স্বামী রাজিব সিকদার বলেন, পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির গাফিলতি এবং অবহেলার জন্য আমার স্ত্রী মুক্তা আক্তার প্রাণ হারিয়েছেন। আমি এঘটনার বিচার চাই। পটুয়াখালী পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির তালতলী জোনাল অফিসের প্রকৌশলী মো.এমদাদুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। আমাদের কর্মীদের কারো কোন অবহেলা ছিল কিনা। তালতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো শাহজালাল বলেন, নিহতের মরাদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।