দুশ্চিন্তায় মারিয়া

নভেম্বর ২৬ ২০২৪, ১৯:২৬

বানারীপাড়া প্রতিনিধি !! আর্থিক অসচ্ছলতার মধ্য দিয়ে বড় হলেও নিজের স্বপ্নের পরিধি কখনও ছোট করেননি বানারীপাড়ার মারিয়া খানম। প্রকৌশলী হওয়ার স্বপ্নপূরণের পথে অনেকটাই এগিয়ে গেছেন। শেষ ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (ডুয়েট) পড়ার সুযোগ পেয়েছেন। এমন আনন্দের খবরের পরও দুশ্চিন্তা ভর করেছে মারিয়া ও তাঁর পরিবারের ওপর। ভর্তির টাকা জোগাড় হলেও পড়ালেখার খরচ আসবে কোথা থেকে, সেই চিন্তায় দিন কাটছে তাদের।

বানারীপাড়া সদর ইউনিয়নের আলতা গ্রামের প্রয়াত তাহের শরীফের ছোট মেয়ে মারিয়া। তিন বেলা ঠিকমতো খেতে ও ভালো পোশাক পরতে না পারলেও অদম্য ইচ্ছাশক্তি ও নিরলস অধ্যবসায় তাঁর শিক্ষাজীবনে একের পর এক সাফল্য এসেছে। ডুয়েটে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন তিনি। কিন্তু ভর্তি ফি, বই কেনা, আবাসন ও খাওয়াসহ লেখাপড়ার যাবতীয় ব্যয়ভার বহন নিয়ে দুশ্চিন্তায় দু’চোখে অন্ধকার দেখছেন।

বানারীপাড়া সদর ইউনিয়নের আলতা গ্রামের প্রয়াত তাহের শরীফের ছোট মেয়ে মারিয়া। মাসহ দুই বোন ও এক ভাইকে নিয়ে তাদের সংসার। বাবা তাহের শরীফ ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে ৫ বছর রোগে ভুগে ২০২০ সালের ৬ জুলাই মারা যান। ছোট বেলা থেকেই দারিদ্র্যের সঙ্গে সংগ্রাম তাদের। লেখাপড়ার পাশাপাশি টিউশনি করেন। বড় বোন মুনিয়া আক্তার বীথিও টিউশনি ও সেলাই করেন। ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালিয়ে নিজের লেখাপড়া ও পরিবারের সদস্যদের ভরণপোষণের ব্যবস্থা করেন ভাই নাঈম শরীফ।

সংসার চালাতে পুরো পরিবারকেই সংগ্রাম করতে হয়। ২০১৯ সালে মারিয়া বানারীপাড়া বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভোকেশনাল শাখা থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে জিপিএ ৫ পান। বৃত্তির জমানো ১০ হাজার টাকা দিয়ে গৌরনদী সরকারি টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি হন। গৌরনদী সরকারি টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে ২০২৩ সালে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন।

এবার ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়ে প্রকৌশলী হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হলেও স্বস্তি নেই তাঁর মনে। ভর্তি ফি, বই কেনা, আবাসন ও খাওয়ার টাকা কীভাবে জোগাড় করবেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন। উচ্চশিক্ষা অর্জন নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন তাঁর বিধবা মা মাকছুদা বেগম, ভাই নাঈম শরীফ ও বোন মুনিয়া আক্তার বীথিও।

বানারীপাড়া বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক ও ভোকেশনাল শিক্ষক সমিতির বরিশাল শাখার সভাপতি জাকির হোসেন জানান, মারিয়ার ভাই ভ্যান চালান। বড় বোন ও সে টিউশনি আর সেলাই করে লেখাপড়ার খরচ জোগায়। অভাব-অনটনের মধ্যেও মারিয়া ডুয়েটে ভর্তির সুযোগ পাওয়ায় শিক্ষক, ম্যানেজিং কমিটিসহ সহপাঠীরা সবাই খুশি।