ঈদের ৯ দিন ছুটিতে মা ও শিশু কল্যান কেন্দ্রে ১১৩ শিশুর জন্ম

এপ্রিল ০৬ ২০২৫, ২০:১০

স্টাফ রিপোর্টার ॥ চিকিৎসক ও স্টাফ সংকটের মাঝেও ঈদের সরকারী ছুটির ৯ দিনে বরিশালে ৬ জেলার ৩০৯টি মা ও শিশু কল্যান কেন্দ্রে জন্ম নিয়েছে ১১৩ শিশু। এই সময়ে ৭৭৯ জন গর্ভবতী নারী নিয়েছেন চিকিৎসা সেবা। আর এর বাইরে সাধারন মা ও শিশু চিকিৎসা সেমবা নিয়েছে ৩ হাজার ৩০৫ জন।

মা ও শিশু কল্যান কেন্দ্র সূত্র জানায়, ঈদেও বন্ধের ৯ দিনে বরিশাল মা ও ঈদের দিন এই হাসপাতালে নরমাল ডেলিভারি হয়েছে একটি। বাবুগঞ্জ উপজেলার চাঁদপাশা ইউনিয়নের খন্তাখালী গ্রামের সিরাজ হাওলাদারের স্ত্রী আনিকা আক্তার পুত্র সন্তানের জন্ম দিয়েছেন।

সিরাজ হাওলাদার বলেন, আমার স্ত্রী আগে থেকেই এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে। তারা বলেছে নরমাল ডেলিভারি হবে। তার পরও ঈদের আগের দিন এখানে এনে ভর্তি করেছি। ঈদের দিন দুপুরে চিকিৎসকের তত্যাবধানে নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে আমার সন্তার জন্ম গ্রহন করে। হাসপাতালের সেবায় আমরা সন্তষ্ট।

এই হাসপাতালে ঈদের ছুটিতে বরিশাল জেলায় মা ও শিশু কল্যান কেন্দ্রে গুলোতে ১৫৪ গর্ভবতী নারী, ১২৩১জন সাধারন মা ও শিশু চিকিৎসা সেবা নিয়েছে। এছাড়া জেলায় এই ৯ দিনে ২৬টি ডেলিভারি হয়েছে এখানকার চিকিৎসকদের তত্বাবধানে।

পটুয়াখালী জেলায় ২০২ জন গর্ভবতী নারী, ৫৮৮জন সাধারন মা ও শিশু চিকিৎসা সেবা নিয়েছে। এই জেলায় ঈদের দিনসহ ছুটির ৯ দিনে ১৪ টি ডেলিভারি হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ৩ টি সিজার হয়েছে।

মা ও শিশু কল্যান কেন্দ্রে চিকিৎসা নিতে আসা প্রসূতির স্বামী সেলিম হোসেন বলেন, ঈদের ছুটিতে আমরা ভেবেছিলাম হয়তো সেবা পাব না, কিন্তু এখানে এসে বিনামূল্যে চিকিৎসা ও প্রসবসেবা পেয়ে খুবই উপকৃত হয়েছি। স্বাস্থ্যকর্মীরা খুব আন্তরিকভাবে সেবা দিয়েছেন।

পটুয়াখালী জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো: শহীদুল ইসলাম জানান, ঈদের ছুটি থাকা সত্ত্বেও ৯ দিনব্যাপী জরুরি স্বাস্থ্যসেবা চালু রাখা হয়েছে। আমরা প্রতিটি প্রসব বিনামূল্যে সম্পন্ন করেছি। সাধারণ স্বাস্থ্যসেবাও চালু ছিল। সবকিছু সার্বক্ষণিকভাবে মনিটর করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, পটুয়াখালীর ৬০টি ইউনিয়নের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে গর্ভকালীন সেবা, প্রসব ও প্রসব-পরবর্তী সেবা, কিশোর-কিশোরী স্বাস্থ্যসেবা এবং সাধারণ চিকিৎসা সেবা নিরবিচারে চালু রয়েছে। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে ছুটিতেও যাতে কেউ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত না হন।

ভোলায় ১৩৭ জন গর্ভবতী নারী, ১১৭ জন সাধারন মা ও শিশু চিকিৎসা সেবা নিয়েছে। এই জেলায় ঈদের দিনসহ ছুটির ৯ দিনে ৪৯ টি ডেলিভারি হয়েছে।

বরগুনায় ৮৪ জন গর্ভবতী নারী, ৩০০জন সাধারন মা ও শিশু চিকিৎসা সেবা নিয়েছে। এই জেলায় ঈদের দিনসহ ছুটির ৯ দিনে ৭ টি ডেলিভারি হয়েছে।

ঝালকাঠিতে ১২৬ জন গর্ভবতী নারী, ৬৪৩ জন সাধারন মা ও শিশু চিকিৎসা সেবা নিয়েছে। এই জেলায় ঈদের দিনসহ ছুটির ৯ দিনে ১২ টি ডেলিভারি হয়েছে।

পিরোজপুরে ৭৬ জন গর্ভবতী নারী, ৪১৮ জন সাধারন মা ও শিশু চিকিৎসা সেবা নিয়েছে। এই জেলায় ঈদের দিনসহ ছুটির ৯ দিনে ৫ টি ডেলিভারি হয়েছে।

বরিশাল পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের সূত্র জানায়, বরিশাল বিভাগে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার ৪১ পদের অনুকূলে কর্মরত আছেন ২১ জন। মেডিকেল অফিসারের ৮১ টি পদের অনুকূলে কর্মরত রয়েছে ২৭ জন। সহকারী উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার ৪০ পদের অনুকূলে কর্মরত আছে মাত্র ১২ জন। সহকারী পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার ৩৮ পদের অনুকূলে কর্মরত নেই একজনও। আর মেডিকেল অফিসারের ২৭ পদের ২৭ টিই শুন্য রয়েছে। সরবরাহ কর্মকর্তার ৩টি পদের অনুকূলে কমৃরত ১ জন। সহকারী সার্জন পদের ৩ জনে কর্মরত আছে ১ জন। অফিস তত্ত্বাবধায়কের ৫ জনের ৫ জনই কর্মরত আছেন। সার্ট মুদ্রাক্ষরিক এর ১২ পদের অনুকূলে কর্মরত আছে ৭ জন।

এই সংকটের মাঝেও চিকিৎসা সেবার মান বৃদ্ধির কথা বলছে এখানকার কর্মকর্তারা। তার মধ্যে এবার ঈদের ছুটিতে বরিশাল বিভাগের ৩০৯টি মা ও শিশু কল্যান কেন্দ্রে চিকিৎসা সেবা অব্যাহত ছিল।

বরিশাল পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের অধিন বরিশাল মা ও শিশু কল্যান কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠান প্রধান মেডিকেল অফিসার ডা: রুনা লায়লা বলেন, মৃত্যু হার কমার কারন হচ্ছে ফেমিলি প্লানিং সেবা। হাসপাতাল মুখি হওয়া। আগে রোগীরা হাসপাতালে না এসে বাড়িতে বসে ডেলিভারী করাতো। আর সেখানে এখন গর্ভবতী হলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেয় এবং হাসপাতালে আসে যে কারনে মাতৃমৃত্যু হার কমে এসেছে। আর এবারই আমরা ঈদের ছুটিতে বরিশালে সর্বোচ্চ সেবা দিয়েছি প্রসূতী মা ও শিশুদের। আমাদের নগরীর এই কেন্দ্রে ঈদের ছুটির ৯ দিনে জন ৫০ গর্ভবতী মা ও ২৫ শিশু চিকিৎসা নিয়েছে। ২৬ মার্চ থেকে ডেলিভারি হয়েছে ১১ প্রসুতি মায়ের। ঈদের দিন একটি নরমাল ডেলিভারী হয়েছে।

পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা মো: আবুল কালাম বলেন, বরিশালে আমাদের অধিনে থাকা মা ও শিশু কল্যান কেন্দ্র ঈদের ছুটির মধ্যেও সকল ধরনের সেবা কার্যক্রম চালু রয়েছে। আমাদের কেন্দ্রগুলোতে চিকিৎসক ও স্টাফ সংকট আছে তার পরেও কোথাও সেবা ব্যহত হয়নি। আমারা সকল ধরনের সেবা সচল রেখেছি।