কঁচা নদীর ভাঙ্গন আতঙ্কে হাজারো মানুষ

পিরোজপুর প্রতিনিধি : বর্ষা মৌসুমের আগমনে পিরোজপুরের নদী তীরবর্তী অঞ্চলের মানুষ আতঙ্কে দিন গুনছে। প্রতিবছরের মতো এবারও দুর্বল বেড়িবাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষিজমি, মাছের ঘের এবং সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা। যদিও পানি উন্নয়ন বোর্ড আশ্বাস দিয়েছে, বরাদ্দ পেলে ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধগুলো মেরামত করা হবে।
হরিণা গাজীপুর এলাকার বাসিন্দা আব্দুল্লাহ হাওলাদার জানান, কঁচা নদীর ভাঙনে তিনি তার বসতভিটা ও প্রায় ১৫ কাঠা জমি হারিয়েছেন। কষ্টের সঙ্গে তিনি বলেন, ‘এক সময় আমাদের জমিজমা ও বসতভিটা ছিল; কিন্তু নদীর ভাঙনে সবকিছু হারিয়ে এখন নিঃস্ব জীবন কাটাচ্ছি।’
এই সমস্যা শুধু আব্দুল্লাহ হাওলাদারের নয়—জেলার বিভিন্ন নদীর তীরে বসবাসকারী হাজারো মানুষের প্রতিদিনের দুর্ভোগের অংশ এটি। নদীকেন্দ্রিক জীবনধারা, হাটবাজার ও স্থানীয় শিল্পায়ন বর্ষাকালে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
বর্ষাকালে নদীর স্রোত বৃদ্ধি পাওয়ায় তীরবর্তী বাঁধ ও পাড় ধসে পড়ে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় হাটবাজার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ঘরবাড়ি। বিভিন্ন গ্রামে ভাঙা বেড়িবাঁধ এবং প্রয়োজনীয় বাঁধের অভাব নদীপাড়ের মানুষের প্রধান উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জোয়ারের পানিতে জমি, ফসল ও মাছের ঘের ডুবে গিয়ে পরিবারগুলো আর্থিক সংকটে পড়ে।
সদর উপজেলার পাড়ের হাট ইউনিয়নের চিথলিয়া গ্রামের কামাল শেখ বলেন, ‘সিডর ঝড়ের সময় আমাদের বেড়িবাঁধ ভেঙেছিল, কিন্তু আজও তা মেরামত হয়নি। এখনো প্রতিদিন জোয়ারের পানিতে ভাসতে হয়। টেকসই বাঁধ না হলে আমাদের এই দুর্ভোগ চলতেই থাকবে।’
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, বর্তমানে কিছু নতুন বেড়িবাঁধ নির্মিত হয়েছে। তবে জেলায় বিদ্যমান ৩১০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে প্রায় ৫৫ কিলোমিটার রয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায়।
পিরোজপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নুসাইর হোসেন বলেন, ‘মানুষের জীবন ও সম্পদ রক্ষায় কিছু নতুন বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। তবে ৬টি পোল্ডারের ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ মেরামতের জন্য প্রাথমিকভাবে ২ হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন। বরাদ্দ পেলে অন্যান্য বাঁধও মেরামত করা হবে।’