বরিশালে নির্বাচনী মাঠ গোছাচ্ছে জামায়াত ইসলামী

ফাহিম ফিরোজ!! আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে মাঠ গোচাচ্ছে বাংলাদেশ জামায়েত ইসলামী। বরিশালেও এর ব্যাতীক্রম নয়। প্রতিদিন সভা সমাবেশ মিছিল মিটিং করে যাচ্ছে দলটি। এমনকি জেলা মহানগর উপজেলা পৌরসভা থেকে শুরু করে ওয়ার্ড পর্যায়ে নতুন কমিটি দিচ্ছে দলটি। যে কমিটিতে স্থান পেয়েছে দলের ত্যাগী ও যোগ্য নেতাকর্মীরা। দলটির নীতিনির্ধারকরাও মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন।
গত ১৫ বছর ধরে দলটির নেতাকর্মীরা হামলা-মামলায় জর্জরিত হয়ে পড়েছিলো। এমনকি দলটির শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে ফাঁসি পর্যন্ত দেয়া হয়েছিলো। ১৫ বছরে একটি সভা-সমাবেশ করতে পারেনি। এছাড়া নিজ ঘরে বসবাস করতে পারেনি নেতাকর্মীরা। গ্রেফতার ও গুমের ভয়তে পালিয়ে ছিলো নেতাকর্মীরা। জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে মরিয়া হয়ে পরে হাসিনা সরকার। সর্বশেষ গত ৪ আগস্ট জামায়েতকে নিষিদ্ধ ঘোষনা করে আওয়ামীলীগ সরকার। ৫ আগস্ট স্বৈরাচার আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর দলটি পুনরায় ঘুরে দাঁড়িয়েছে। ফিরে পেয়েছে দলের নিবন্ধন। এরপর থেকেই সারাদেশে নড়েচড়ে বসে দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ। একের পর এক সভা-সমাবেশ করেছে। এছাড়া কর্মীদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে প্রশিক্ষণও দিচ্ছেন। টার্গেট একটাই আগামী জাতীয় নির্বাচন। এই নির্বাচনকে ঘিরে বরিশাল জেলা ও মহানগরকে নতুনভাবে ঢেলে সাজিয়েছে দল। প্রতিটি উপজেলায় সম্মেলন করছে দলটি। বরিশালের ৬টি আসনেই প্রার্থী দিবে দলটি। এ লক্ষ্যে প্রতিটি আসনে সভা সমাবেশ করছে বলে জানান একাধিক নেতাকর্মী।
জানা গেছে, আগস্টে শেখ হাসিনার পতনের পর বরিশালের সকল জেলা উপজেলায় জামায়েত ইসলামীর কার্যক্রম আরও জোড়দার করেছে। প্রতিদিন দলীয় প্রোগ্রাম পালন করছে দলটি। নতুন করে গঠন করা হয়েছে জেলা ও মহানগর, উপজেলা, ওয়ার্ড জামায়াতের কমিটি।
গত ২৪ অক্টোবর কেন্দ্রীয় জামায়াত বিভাগের ৬ জেলার আমীরদের নাম ঘোষণা করেন। এরা হলেন, বরগুনায় মাওলানা মো. মহিববুল্লাহ, পটুয়াখালী এ্যাডভোকেট নাজমুল আহসান, ভোলায় মুহা. জাকির হোসেন, বরিশাল মহানগরে জহির উদ্দিন মুহাম্মদ বাবর, বরিশাল জেলায় অধ্যাপক মোহাম্মদ আব্দুল জব্বার, ঝালকাঠিতে এডভোকেট হাফিজুর রহমান, পিরোজপুরে অধ্যক্ষ তাফাজ্জল হোসাইন ফরিদ। এরপর গত ২৪ নভেম্বর বরিশাল মহানগর জামায়াতের ১৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির নাম ঘোষণা করেন। সরকার পতনের পর বাবুগঞ্জ, বাকেরগঞ্জ, মুলাদী, হিজলা, গৌরনদীসহ ১০ উপজেলায় ১৭ বছর পরে সভা সমাবেশ করেছে দলটি।
জানা যায়, ১৫ বছর দৃশ্যমান রাজনীতি তো দূরে থাক, বরিশালে পারিবারিক কোনো উৎসব আয়োজনেও অংশ নিতে পারেননি জামায়াত নেতারা। তবে, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর, দেশের পরিবর্তী পরিস্থিতি সারা দেশের মতো বরিশালেও সক্রিয় দলটি। প্রকাশ্যে বড়সড় সমাবেশের মধ্যদিয়ে দলীয় ও সামাজিক কর্মকাণ্ড করছেন দলটির নেতাকর্মীরা। বিভাগের ৬ জেলাতেই দলটির জেলা, উপজেলা, ইউনিট কমিটিগুলো মাঠের রাজনীতিতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। তৃণমূলের নেতারা চাইছেন, দলকে আরও শক্তিশালী করে সামনের দিকে এগোতে। সম্প্রতি বরিশালের বেশ কয়েকটি জেলা পরির্দশন করেছেন দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান।
বরিশাল মহানগর জামায়েত ইসলামীর আমীর অধ্যক্ষ জহির উদ্দিন মুহাম্মাদ বাবর বলেন, বাংলাদেশ জামায়েত ইসলামী একটি বৈধ রাজনৈতিক দল হলেও গত ১৫ বছর আমাদের প্রাকাশ্যে কোন কার্যক্রম করতে দেয়নি স্বৈরাচার সরকার। ৫ আগস্ট দ্বিতীয় বিপ্লবের পরে আমারা দলের কার্যক্রম প্রাকাশ্যে করতে পারছি। দলের গঠনতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনুযায়ী জেলা-উপজেলা-পৌরসভা সহ সকল পর্যায়ের কমিটিকে নতুন করে সাজানো হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের কার্যক্রম আরও বৃদ্ধি করা হবে। এ জন্য জেলা উপজেলায় সম্মেলন হচ্ছে। দেশের সংস্কার কার্যক্রম শেষে অন্তবর্তীকালীন সরকার একটি সুষ্ঠু সংসদ নির্বাচন উপহার দিবে বলে আশা রাখেন তিনি।