অব্যবস্থাপনায় সৌন্দর্য হারাচ্ছে কুয়াকাটা

কুয়াকাটা প্রতিনিধি !! কয়েক বছর আগেও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পর্যটকদের টেনে আনত কুয়াকাটার বালুভূমিতে। একই জায়গায় দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত আর সূর্যোদয় দেখতেন তারা। অব্যাহত ভাঙন ও নানা অব্যবস্থাপনার কারণে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অন্যতম আকর্ষণ এ সৈকত এখন শ্রীহীন। বালু ধুয়ে কোথাও নিচু, কোথাও উঁচু হয়ে গেছে। কোথাও বা ছোট-বড় গর্ত দেখা দিয়েছে। ছড়িয়ে আছে জীর্ণ জিও টিউব-জিও ব্যাগ।
সম্প্রতি সৈকতের সৌন্দর্য রক্ষায় বেলাভূমি এবং সৈকতে যাওয়া সড়কের দুই পাশের অবৈধ স্থাপনা অপসারণ করা হয়েছে। এর পর থেকে সেখানে আলোর ব্যবস্থা নেই। সন্ধ্যায় ভূতুড়ে অবস্থা বিরাজ করে সেখানে। এসব কারণে মৌসুম শুরু হলেও ছুটির দিনেও তেমন আসছেন না পর্যটক। গত তিন সপ্তাহের সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও কুয়াকাটায় পর্যটকশূন্য দেখা যায়। এতে বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরাও। কমে গেছে তাদের বেচা-বিক্রি।
স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. শাহ জালাল বলেন, সৈকতের জিরো পয়েন্ট এলাকাটি এক সময় জমজমাট ছিল। প্রশাসন দোকান সরিয়ে দেওয়ায় এলাকাটি ফাঁকা হয়ে গেছে। সন্ধ্যার পর ভূতুড়ে পরিবেশ সৃষ্টি হয়। কেউ সৈকতে আসতে চান না। এতে বেচা-বিক্রি কমে গেছে।
ঝিনুক ব্যবসায়ী আবদুল হালিম বলেন, দোকানপাট সরিয়ে নেওয়ায় পর্যটকরা কোথায় খাবেন, ঘুরবেন, কেনাকাটা করবেন– তা নিয়ে হয়রানি শিকার হচ্ছেন। এসব কারণে মৌসুম শুরু হলেও পর্যটকদের দেখা নেই। শ্রীহীন কুয়াকাটায় এখন কেউ আসতে চান না। বেচা-বিক্রিও নেই বললেই চলে।
ঢাকার বনশ্রী থেকে আসা পর্যটক মাইদুল ইসলাম বলেন, আগে কুয়াকাটা আসতে ১৬ থেকে ১৭ ঘণ্টা লাগত। পদ্মা ও পায়রা সেতু হওয়ায় ৬-৭ ঘণ্টায় পৌঁছতে পারছি। কিন্তু কুয়াকাটার আগের সেই সৌন্দর্য নেই। সন্ধ্যা হলেও অন্ধকার সৈকতে বখাটেদের উৎপাত বেড়ে যায়।
আশির দশক থেকে কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত ঘিরে সম্ভাবনার ক্ষেত্র তৈরি হয়। একই স্থানে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয়-সূর্যাস্ত উপভোগ, উত্তাল ঢেউ, সারি সারি নারিকেল ও ঝাউবাগান, রাখাইন সম্প্রদায়ের বৈচিত্র্যময় পরিবেশ ও বৌদ্ধ বিহারের নয়নাভিরাম দৃশ্য অবলোকন করতে দেশ-বিদেশের ভ্রমণপিপাসুরা আসতে থাকেন এখানে। ২০১০ সাল থেকে কুয়াকাটা সৈকত বা পর্যটন এলাকায় প্রবলভাবে ভাঙন শুরু হয়। বছরে গড়ে ১৫০ মিটার করে ভাঙলে গত ১৩ বছরে কমপক্ষে ১ হাজার ৯৫০ মিটার সৈকত এলাকা সাগরে বিলীন হয়েছে। এর পর সৈকতের সৌন্দর্য রক্ষায় মহাপরিকল্পনা নেওয়া হয়।
২০১০ সাল থেকেই কুয়াকাটা উন্নয়নের মহাপরিকল্পনার উদ্যোগ নেয় সরকার। সৈকত রক্ষায় বাঁধ নির্মাণ, অভ্যন্তরীণ সড়ক প্রশস্তকরণ, ড্রেনেজ ও পয়ঃনিষ্কাশন, ট্যুরিস্ট স্পট বাড়ানো, ফাইভস্টার হোটেল নির্মাণ, স্টেডিয়াম, মেরিন পার্ক, সি-অ্যাকুয়ারিয়াম, জাদুঘর, কটেজ অ্যান্ড ইকো ট্যুরিজম, মেরিন ড্রাইভ, জেনারেল ট্যুরিস্ট জোন, ওয়াচ টাওয়ার, ইকোপার্ক, পিকনিক স্পট, পর্যটকদের নিরাপত্তা ছিল এ পরিকল্পনায়। এটি বাস্তবায়নে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে একাধিকবার বৈঠকও হয়। কিন্তু ১৪ বছর পেরিয়ে গেলেও তা আলোর মুখ দেখেনি। বর্তমানে কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনায় ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ সৈকতটি অরক্ষিত।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের পটুয়াখালীর নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফ হোসেন বলেন, সৈকত রক্ষায় অনেক আগেই ৭০০ কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলেই কাজ শুরু হবে। অনুমোদন পেতে কেন এত সময় লাগছে, এর সদুত্তর দিতে পারেননি এ কর্মকর্তা।
কুয়াকাটা সৈকত ব্যবস্থাপনা (বিচ ম্যানেজমেন্ট) কমিটির সদস্য সচিব ও কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম জানান, সৈকত ঘেঁষে রাস্তার কাজ চলছে। দুই মাসের মধ্যে কাজ শেষ হবে। তখন পর্যটকদের যাতায়াতে সমস্যা থাকবে না।