মুক্তিযোদ্ধা দলের কমিটিতে আ. লীগের পদধারী নেতা!

আগস্ট ২৯ ২০২৫, ১৮:৫৭

আমতলী প্রতিনিধি : বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল বরগুনা জেলা শাখার কমিটিতে সহসভাপতির পদ পেয়েছেন আমতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সহসভাপতি ও সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান বীরমুক্তিযোদ্ধা অ্যাড. একেএম সামসুদ্দিন সানু ওরফে কমান্ডার সানু।

কমিটিতে উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতাকে সহসভাপতির পদ দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীসহ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের উপজেলা কমিটির সদস্যরা। তবে বরগুনা জেলা মুক্তিযোদ্ধা দলের সাধারণ সম্পাদক জানান, ভুলবশত নামটি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। শিগগিরই ওই কমিটি সংশোধন করা হবে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বরগুনা জেলা জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল থেকে পদত্যাগ করে মুক্তিযোদ্ধা সংসদে যোগদান করেন বরগুনা জেলার কয়েক জন নেতা। এতে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল বরগুনা জেলার কয়েকটি পদ শূন্য হয়ে যায়। শূন্য পদগুলো পূরণের জন্য নতুন করে জাতীয়তাবাদী দলের অনুসারী মুক্তিযোদ্ধাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করতে কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে আবেদন করেন জেলার নেতারা। পরে কেন্দ্রীয় কমিটি বরগুনা জেলার সংশোধিত কমিটি অনুমোদন দেয়। আর এতেই বাধে বিপত্তি।

মুক্তিযোদ্ধাদের একটি সূত্র জানায়, বর্তমান জেলা কমিটির সভাপতির দায়িত্বে থাকা মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম (কাস্টমস নুরু) একজন বিতর্কিত ব্যক্তি। যিনি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কখনো বিএনপি’র, কখনো আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে প্রকাশ্যে সমর্থন ও নির্বাচনী প্রচার-প্রচারনা এবং সভা-সমাবেশ অংশ নিয়েছেন। এমনকি বিএনপি নির্বাচন বর্জন করলেও তিনি নিজে গত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হাজারের ওপর ভোট পেয়ে জামানত হারান।

পত্রকমিটি জানায়, বিএনপি’র অনুসারী হিসেবে নিজেকে দাবি করলেও গত ১৭ বছরে ফ্যাসিবাদ বিরোধী কোনো আন্দোলন সংগ্রামে মনিরুল ইসলাম তালুকদারকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। একটিও মামলা-হামলার স্বীকার হননি তিনি। উল্টো প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগের পক্ষালম্বন করেছেন। গত ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পদত্যাগের পর থেকে তিনি বরগুনা জেলা মুক্তিযোদ্ধা দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আবারও রাজনীতিতে আর্বিভূত হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে কমিটি বাণিজ্য, বদলি বাণিজ্য, শালিস বাণিজ্যসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে গিয়ে অনৈতিক সুবিধা নিতে দপ্তর প্রধানদের ভয়ভীতি ও দেখে নেওয়ার হুমকি প্রদান করেন বলে একাধিক মুক্তিযোদ্ধা অভিযোগ করেন।

আমতলী উপজেলা বিএনপি’র সিনিয়র নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা এবিএম সিদ্দিকীসহ একাধিক মুক্তিযোদ্ধা বলেন, ‘বরগুনা জেলা মুক্তিযোদ্ধা দলের এই দুই বিতর্কিত ব্যক্তি (সভাপতি- সাধারণ সম্পাদক) জেনেশুনে উৎকোচের বিনিময়ে চিহ্নিত আওয়ামী লীগের দোসরদের জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের কমিটির বিভিন্ন পদে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। এর বড় প্রমাণ আমতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাড. একেএম সামসুদ্দিন সানু ওরফে কমান্ডার সানুকে বরগুনা জেলা মুক্তিযোদ্ধা দলের কমিটিতে সহসভাপতির পদ দেওয়া। এমনকি বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির ক্রীড়া সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা দারুল ইসলামকেও জেলা মুক্তিযোদ্ধা দলের সহসভাপতি করা হয়েছে।’ আমতলী উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক জহিরুল ইসলাম (ভিপি মামুন) বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের জন্য অত্যন্ত লজ্জার এবং বিব্রতকর। এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়ার মতো না। মুক্তিযোদ্ধা দলের কমিটির পদে থেকে চিহ্নিত আওয়ামী দোসরদের যারা ওই কমিটির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করেছেন তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে দাবি জানাই। আর দ্রুত জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল বরগুনা জেলা কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন করে প্রকৃত বিএনপিমনা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে জেলা কমিটি গঠনের জন্য অনুরোধ জানাই।’

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল বরগুনা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. মনিরুল ইসলাম তালুকদার বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমরা মাঠে না থাকায় এবং দলীয় কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ায় আমরা অনেককেই চিনতে পারিনি। এ কারণে কমিটির সদস্য নির্বাচিত করতে ভুলবশত কমিটিতে আওয়ামী লীগ নেতার নাম ঢুকে পড়েছে। আমরা শিগগিরই সেই নামগুলো বাদ দিয়ে কমিটি সংশোধন করব।’ আপনি আমতলীর বীর মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগের উপজেলা কমিটির সহসভাপতি অ্যাড. একেএম সামসুদ্দিন সানুকে (কমান্ডার সানু) চিনেন কিনা? তিনি কিভাবে বরগুনা জেলা মুক্তিযোদ্ধা দলের কমিটিতে সহসভাপতির পদ পেলেন? এসব প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে গেলেও তার বিরুদ্ধে আনা দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি। গত ২০ আগস্ট তারিখে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ইসতিয়াক আজিজ উলফাত স্বাক্ষরিত এক পত্রে ৪০ সদস্য বিশিষ্ট বরগুনা জেলার সংশোধিত কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ওই কমিটির বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বেশ হাস্যরস সৃষ্টি হয় ও বিএনপি’র নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।