বেড়িবাঁধ কেটে সুড়ঙ্গপথ

ডিসেম্বর ১৫ ২০২৪, ১৮:৫৫

বরগুনা প্রতিনিধি !! বরগুনা সদর উপজেলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ কেটে সুড়ঙ্গ করার অভিযোগ উঠেছে এক ইটভাটার মালিকের বিরুদ্ধে। সেই সুড়ঙ্গপথে চলছে ইটসহ ভাটার মালামাল পরিবহন। এতে বাঁধসহ এলাকা জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। যদিও ওই ইটভাটার কর্মচারীদের দাবি, তারা নন, আগের মালিক বাঁধ কেটে ওই পথ নির্মাণ করেছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায় এসবিসি ব্রিকসের বর্তমান মালিক বরগুনা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান হলেও কুমড়াখালী গ্রামের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ঘেঁষে একটি ইটভাটা স্থাপন করেন গোলাম মোস্তফা নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি। নদ থেকে বালু ও মাটি এবং নৌযানে করে আনা অন্যান্য মালামাল সহজে আনা ও নেওয়ার জন্য বাঁধটি কেটে পাকা সুরঙ্গ পথ তৈরি করা হয়। বাঁধ কেটে কালভার্ট তৈরি করায় ঘূর্ণিঝড় ও অতিমাত্রার জোয়ারে পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়ে। এতে জমির ফসল ও বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দুই বছর আগে ইটভাটাটি কিনে নেন সিদ্দিকুর রহমান। তিনি কেনার পরও একই ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।

সরেজমিনে বরগুনা সদর উপজেলার বদরখালী ইউনিয়নের কুমড়াখালী এলাকার গিয়ে দেখা গেছে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ কেটে পাকা কালভার্টের আদলে একটি সুরঙ্গ পথ নির্মাণ করা হয়েছে। যেখান থেকে ছোট ছোট ভ্যান গাড়িতে করে বাঁধের এক পাশ থেকে অন্য পাশে পরিবহন করা হচ্ছে কাঁচাইট। এছাড়া ইটভাটার পরিধি বাড়ানোর জন্য খাকদোন নদের চরের ২০০ ফুট ইট ও খোয়া ফেলে ভরাট করা হয়েছে।

ফুলতলা এলাকার বাসিন্দা কামাল বলেন, ‘এই কালভার্ট টা তৈরি করা হয়েছে শুধুমাত্র ইটভাটার মালামাল পরিবহনের সুবিধার্থে। ছাড়া কোন উপকার নেই এই কালভার্ট দিয়ে। বন্যার সময় এই কালভার্ট দিয়েই প্রথমে পানি ঢুকে আমাদের গ্রামে। এর পাশেই খালের সরকারি কালভার্টে গেট দেয়া আছে চাইলে সেটা বন্ধ করা বা খোলা যায়। আর এটার কিছুই নেই।’

রিপন নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমি ছোটবেলা থেকে কখনো এই কালভার্টে কোন গেইট দেখিনি। ঘূর্ণিঝড় বা নদীতে অতিরিক্ত জোয়ারের সময় এখান থেকেই পানি প্রবেশ করে। আমরা এই কালভার্টটা বন্ধের দাবি জানাই।’

এ বিষয়ে এসবিসি ইটভাটার ডেলিভারি ম্যানেজার মো. রিপন বলেন, ‘এই ইটভাটাটি আমরা দু’বছর আগে কিনেছি। এই ভাটার আগের মালিক ৮-১০ বছর আগে এই কালভার্টটি মালামাল পরিবহনের জন্য তৈরি করে রেখেছিলেন। তাছাড়া এটা ব্যবহার না করার জন্য আমরা কোন লিখিত কোন নোটিশ বা কোন অবজেকশন পাইনি। তাই আমরা এটা ব্যবহার করছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘ইটভাটার কার্যক্রম ছয় মাস চলে। বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই আমাদের কাজ শেষ হয়ে যায়। তখনই ওই পথ মাটি ফেল বন্ধ করে রাখি, যাতে এলাকায় পানি না ঢুকতে পারে।’

নদীর জমি দখলের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা আগের মালিক আমাদের যেভাবে দিয়েছে আমরা সেভাবেই ব্যবহার করছি। এখন এটা সরকারি জমি কিনা সে বিষয়ে আমাদের মালিকপক্ষ ভালো বলতে পারবেন। এ বিষয়ে ইটভাটা মালিক সিদ্দিকুর রহমানের সাথে কথা বলার জন্য তার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিব বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে মালিক পক্ষকে নোটিশ দিয়েছি যাতে কালভার্টটি ভেঙে ফেলে বাঁধটি পূর্বের অবস্থায় নিয়ে আসে। যদি তারা আমাদের দেয়া নোটিশের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাঁধটি পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে না নিয়ে আসে তবে আমরা নিজেরাই এটি ভেঙে ফেলবো এবং বাঁধকে পূর্বের অবস্থা ফিরিয়ে নিয়ে আসবো।