অব্যবস্থাপনায় ধুঁকছে স্বরূপকাঠি বিসিক শিল্পনগরী

পিরোজপুর প্রতিনিধি : পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদ উপজেলার কৌরিখাড়া এলাকার সন্ধ্যা নদীর তীরে ১৯৬২ সালে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয়েছিল এক আধুনিক স্বরূপকাঠি বিসিক শিল্পনগরী। উদ্দেশ্য ছিল দেশের অর্থনীতির ভিত মজবুত করা এবং এই জনপদকে উন্নয়নের আলোকবর্তিকা হিসেবে গড়ে তোলা। তবে ৬৩ বছরের পথচলায় সেই উদ্দেশ্য আজ অনেকটাই ফিকে। উন্নয়ন আর আধুনিকতার ছোঁয়া তো দূরের কথা, বেহাল অবস্থা আর অব্যবস্থাপনাই এখন এই শিল্পনগরীর প্রধান পরিচয়।
২৮ দশমিক ৭৪ একর জমির ওপর গড়ে ওঠা এই শিল্পনগরী এক সময় ছিল উদ্যোক্তাদের স্বপ্নের ঠিকানা। বিসিকের তথ্য মতে, এখানে মোট ৯৯টি শিল্প প্রতিষ্ঠান পণ্য উৎপাদনের জন্য নিবন্ধিত, যার মধ্যে বনজ শিল্প, পাট ও পাটজাত পণ্য, ওষুধ ও রাসায়নিক দ্রব্য এবং কাঁচা সিরামিক শিল্প রয়েছে উল্লেখযোগ্যভাবে। প্রতিবছর এখানে উৎপাদিত পণ্যের বাজারমূল্য প্রায় ১৬৯ কোটি টাকা, যার মাধ্যমে সরকার আয় করে ১৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকা রাজস্ব। তবে এই সংখ্যাগুলো বাস্তব চিত্রকে পুরোপুরি প্রতিফলিত করে না।
সরেজমিনে দেখা যায়, বর্তমানে অধিকাংশ প্লটই খালি পড়ে আছে, কিছু কিছু প্লটে কেবল সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে, কার্যক্রম নেই বললেই চলে। অভ্যন্তরীণ সড়কগুলো বৃষ্টির পানিতে কাদায় রূপ নেয়, চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে অনেক জায়গায়। ড্রেনেজ ব্যবস্থা একেবারেই অকার্যকর। শিল্পনগরীতে নেই নির্দিষ্ট সীমানা প্রাচীর, ফলে বহিরাগতদের অবাধ চলাচল এবং নিয়মিত চুরি-ডাকাতির ঘটনা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হচ্ছে কর্তৃপক্ষ।
শ্রমিক ও শিল্পমালিকরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছেন, শুধু উদ্বোধন আর কাগজে-কলমে পরিকল্পনায় সীমাবদ্ধ থাকলে শিল্পনগরী চলবে না। বাস্তবিক উন্নয়ন দরকার। তাদের অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও পর্যাপ্ত নজরদারির অভাবেই এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
বিসিক শিল্প নগরীর শারমিন রোপ কারখানার মালিক মো. শাহ আলম, আমাদের পরিবার তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে বিসিকে ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। কিন্তু এই শিল্পনগরীর ভিত মজবুত করার মতো কোনো সরকারি উদ্যোগ চোখে পড়ে না। ভাঙা রাস্তা, বিদ্যুৎবিহীনতা, আর নূন্যতম সুযোগ-সুবিধার অভাব এসব মিলিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করাই এখন চ্যালেঞ্জ। যদি সরকার একটু গুরুত্ব দিত তাহলে এখানকার চেহারাই পাল্টে যেত।
মর্ডান ফার্নিচার নামে একটি কাঠশিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিক মো. মেহেদী হাসান ইমরান বলেন, প্রতিদিন চুরি-ডাকাতির আতঙ্কে থাকতে হয়। সীমানা প্রাচীর নেই, নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই একটা ফায়ার সার্ভিস ঢোকারও ঠিকমতো রাস্তা নাই এভাবে ব্যবসা করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। আমরা চাই কর্তৃপক্ষ যেন দ্রুত এর একটা সঠিক ব্যবস্থা নেয়।
লতিফ শেখ নামে এক শ্রমিক বলেন, বৃষ্টির দিনে কাজে আসতে গিয়ে কাদার মধ্যে পড়ে গিয়ে চোট খেয়েছি। রাস্তাঘাটের অবস্থা এমন যে হেঁটে চলাও কষ্টকর। বিশ্লেষকদের মতে, স্বরূপকাঠি বিসিক শিল্পনগরী এক সময় দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতির বড় শক্তি হতে পারত। বনজ শিল্পের কেন্দ্র হিসেবে এটি ছিল বিশেষ সম্ভাবনাময় একটি এলাকা। কিন্তু অবকাঠামোগত দুর্বলতা, নিরাপত্তাহীনতা এবং প্রশাসনিক অনীহা এই সম্ভাবনাকে দিন দিন নিঃশেষ করে দিচ্ছে।
পিরোজপুর জেলা ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন বিসিক এর ভারপ্রাপ্ত উপব্যবস্থাপক এইচ এম ফাইজুর রহমান বলেন, স্বরূপকাঠি বিসিক শিল্পনগরীতে দীর্ঘদিন যাবত যাতায়াত এবং অবকাঠামোগত বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে। ধাপে ধাপে বিসিক বিভিন্ন সময়ে যে সুবিধা প্রদান করেছে তা প্রয়োজনের তুলনায় স্বল্প। বিষয়টি বিসিক কর্তৃপক্ষ নজরে এনেছেন। এ বিষয়ে প্রধান কার্যালয়ে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে এবং বিসিক চেয়ারম্যান আশ্বাস প্রদান করেছেন।