পিরোজপুরের ৫৩৯ স্কুলে নেই প্রধান শিক্ষক

সেপ্টেম্বর ০৩ ২০২৫, ১৯:৩৪

পিরোজপুর প্রতিনিধি : পিরোজপুরে ৫৩৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। এ ছাড়া ২২০টি সহকারী শিক্ষকের পদও শূন্য রয়েছে। এতে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ের হিসাব অনুযায়ী, পিরোজপুরে সাত উপজেলায় ৯৮৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। ওই বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রধান শিক্ষকের অনুমোদিত পদ আছে ৯৮৯টি। ৯৮৯টি পদের মধ্যে কর্মরত ৪৫০ জন প্রধান শিক্ষক। এর মধ্যে সরাসরি নিয়োগ পদ রয়েছে ২৩টি, বাকি পদগুলো পদোন্নতি।

দীর্ঘদিন ধরে সরাসরি নিয়োগের ২৩টি পদ শূন্য রয়েছে। ৩০৩টি বিদ্যালয়ে চলতি দ্বায়িত্ব ও বাকি ২৩৬টি বিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়েই কার্যক্রম চলছে। জেলার ৯৮৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বর্তমানে ভর্তি হিসেবে এক লাখ ১১ হাজার ৫১ জন শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছে। এসব শিক্ষার্থীর বিপরীতে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক মিলে কর্মরত মাত্র ৫ হাজার ১৮৪ জন।

সহকারী শিক্ষকের অনুমোদিত পদ চার হাজার ৯৫৯টি। ওই পদে শূন্য আছেন ২২০ জন শিক্ষক। এ ছাড়া বিদ্যালয় পরিচালনার জন্য ৪৩টি সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার (এইউইও) পদ রয়েছে। এর মধ্যে কর্মরত ১৯ জন সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা। বাকি ২৪টি পদ বিভিন্ন মেয়াদে শূন্য রয়েছে।

শূন্যতার শেষ নেই খোদ জেলা অফিসও কর্মচারীর অভাবে দাপ্তরিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। জেলা অফিসসহ সাত উপজেলায় ১১ গ্রেড থেকে ২০ গ্রেডের পদ আছে ৪৪টি, যার বিপরীতে কর্মরত আছেন ৮ জন, শূন্যপদ ৩৬টি। জেলার ৮টি অফিসে এমএলএস নেই একজনও, ১৬ গ্রেডে ১৮ জনের বিপরীতে ৮টি অফিসে কর্মরত আছেন ৫ জন, ১৪ গ্রেডে ৮ জনের স্থানে আছে একজন, ক্যাশিয়ারের পদটিও শূন্য, সহকারী ক্যাশিয়ারের ৭টি পদে কর্মরত একজন, নেই ড্রাইভারও। অফিসের কর্মচারীরা জানান, ২০০৪ সালের পর কোনো পদে নিয়োগ হয় নাই। এই পদগুলো শূন্য রয়েছে ২১ বছর ধরে।

জেলার সদর উপজেলায় প্রধান শিক্ষকের ১৩৩টি পদের মধ্যে নেই ৬৭টি, চলতি দ্বায়িত্বে ৩৫ জন, নাজিরপুর উপজেলায় ১৮২টি মধ্যে নেই ৮৬টি, চলতি দ্বায়িত্বে ৪২ জন, ইন্দুরকানী উপজেলায় ৬৯টি মধ্যে নেই ৪৪টি, চলতি দ্বায়িত্বে ২৯জন, মঠবাড়িয়া উপজেলায় ২০৬টি মধ্যে নেই ১৩৫টি, চলতি দ্বায়িত্বে ৫৪ জন, ভান্ডারিয়া উপজেলায় ১৬২টি মধ্যে নেই ৮৮টি, চলতি দ্বায়িত্বে ৮৪ জন, নেছারাবাদ উপজেলায় ১৭০টি মধ্যে নেই ৮৫টি, চলতি দ্বায়িত্বে ৪৪জন এবং কাউখালী উপজেলায় ৬৭টি মধ্যে নেই ৩৪টি, চলতি দ্বায়িত্বে ১৫ জন। সরাসরি নিয়োগ ২৩ প্রধান শিক্ষক পদে প্রার্থী হতে ইচ্ছুক কয়েকজনের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, এই পদটিতে দ্রুত নিয়োগ দেওয়া হোক।

জেলার সাতটি উপজেলার অত্যন্ত ৩০টি স্কুলের চলতি দ্বায়িত্ব ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জানান, প্রধান শিক্ষক না থাকায় শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিতে সহকারী শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষকের দ্বৈত দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। বিদ্যালয়ের দৈনন্দিন কাজের পাশাপাশি প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করতে অনেককে বেশ বেগ পোহাতে হয়। আমাদের চলতি দ্বায়িত্ব ও ভারপ্রাপ্ত থেকে পদোন্নতি করা হোক। অভিভাবকদের অভিযোগ, শিক্ষক কম থাকায় শিক্ষার্থীরা সঠিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

পিরোজপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল বলেন, প্রধান শিক্ষকদের পদশূন্য থাকার কারণে শিক্ষার্থীরা সঠিক পাঠদান থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। একজন প্রধান শিক্ষকের বিভিন্ন কাজ থাকে, এ কাজগুলো যদি চলতি বা ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক থেকে করা হয়, তাহলে ওই শিক্ষকের শ্রেণি পাঠদান করানো হয় না। শূন্য পদগুলো খুব দ্রুত পূরণ করার চেষ্টা চলছে। সরকার আমাদের ডিপার্টমেন্ট পর্যায়ক্রমে পদোন্নতি দিচ্ছে। নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন, এগুলো নিয়োগ হবে।

বরিশাল বিভাগীয় উপ-পরিচালক মিজ নিলুফার ইয়াসমিন জানান, আমাদের যতগুলো পদশূন্য আছে, তার তথ্য সংগ্রহ করে মন্ত্রণালয়ে দেওয়া হয়েছে। আশা করি, দ্রুত নিয়োগ প্রক্রিয়া ও পদোন্নতি করা হবে।