স্পীডবোট দূর্ঘটনা এড়াতে কঠোর নদীবন্দর কর্তৃপক্ষ
সন্ধ্যার পরে স্পীডবোট চলাচলে নিষেধাজ্ঞা, আটজনের বেশি যাত্রী নয়

ফাহিম ফিরোজ, বরিশাল ॥ কীর্তনখোলায় স্পীডবোট দূর্ঘটনায় ৫ জন নিহতের পরে নড়েচরে বসেছে নদী বন্দর কর্তৃপক্ষ। বোট চলন্ত অবস্থায় যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া উত্তোলন না করার পাশাপাশি সন্ধ্যার পরে স্পীডবোট চলাচল নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। দূর্ঘটনা রোধে জেলা প্রশাসন, নৌ-পুলিশ, কোস্ট গাডসহ বিভিন্ন দপ্তরকে চিঠি দেয়া হয়েছে। একই সাথে স্পীডবোট মালিক সমিতির কাছে পাঠানো পত্রটি। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।
বরিশাল নদী বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গত ডিসেম্বরে এ সংক্রান্ত চিঠি মালিক সমিতিসহ প্রতিটি দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, বরিশাল-ভোলা রুটে স্পীডবোটে চলাচলরত চালক ও যাত্রীদেরকে বাধ্যতামূলক লাইফ জ্যাকেট পড়তে হবে। আটজনের বেশি যাত্রী স্পীডবোটে উঠতে পারবে না। বোট চলন্ত অবস্থায় যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া তুলতে পারবে না। সন্ধ্যার পরে স্পিড বোট চলাচল করতে পারবে না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে সন্ধ্যার পরে চলাচল করতে পারবে। পাশাপাশি স্পীডবোটের রুট পারমিট, সার্ভে রেজিষ্ট্রেশন ও চালকদের লাইসেন্স হাল নাগাদ করতে হবে। এছাড়া বরিশাল ডিসি ঘাট ও ভোলা লঞ্চ ঘাটে নদী বন্দর কর্তৃপক্ষের দুজন ট্রাফিক সুপারভাইজার এ বিষয় তদারকিতে নিয়োজিত রয়েছেন।
এ ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিএ’র ইন্সপেক্টর জুলফিকার আলী বলেন, নদী বন্দর কর্তৃপক্ষের দেয়া নির্দেশনা অনুযায়ী মালিক সমিতি স্পীডবোট পরিচালনা করছেন। পাশাপাশি বিষয়টি তদারকি করার জন্য দুই জেলায় দুজন ট্রাফিক সুপারভাইজকে নিয়োজিত করা হয়েছে। তাছাড়া স্পীডবোটের ভাড়া বিষয়ে সার্ভে করা হয়েছে। ভাড়ার প্রস্তাবনা ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত ভাড়া নির্ধারণ করা হয়নি।
বিআইডব্লিউটিএ সূত্র জানায়, নির্দেশনাটি নৌ-পুলিশ-কোস্ট গার্ডসহ বিভিন্ন দপ্তরকে পাঠানো হয়েছে। এই নির্দেশের ব্যতয় ঘটলে এ দপ্তরগুলো ব্যবস্থা নিতে পারবে।
গত ৫ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার কীর্তনখোলায় ভোলা-ভেদুরিয়া লঞ্চঘাট থেকে বরিশালের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা নামবিহীন যাত্রীবাহী স্পীডবোটের সাথে একটি মালবাহী স্টীলবডি ট্রলারের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের ফলে স্পীডবোটটি সম্পূর্ণভাবে নদীতে নিমজ্জিত হয়। স্পীডবোটে চালকসহ ৯ জন যাত্রী ছিলো। এর মধ্যে ৪ জন যাত্রী নিখোঁজ হয় এবং স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় ৫ জন সাঁতরে নদীর তীরে উঠতে সক্ষম হয়। তবে উদ্ধারকৃতদের মধ্যে ২ জন যাত্রীর অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় তাদেরকে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য প্রেরণ করা হয়। পরবর্তীতে কর্তব্যরত চিকিৎসক মোঃ ডালিম মাহমুদ (৩৫) নামে একজনকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এর চারদিন পরে ৮ ডিসেম্বর আরো ৩ জনের ভাসমান মরোদেহ উদ্ধার করে নৌ-পুলিশ।
বরিশাল নদী বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল থেকে ভোলা রুটে মাত্র ২২টি, লাহারহাট থেকে ভোলার বেদুরিয়া রুটে বৈধ স্পীডবোট রয়েছে মাত্র ১৬টি এবং তালতলী থেকে ২টি বৈধ স্পীডবোট চলাচল করে। কিন্তু এ রুট থেকে প্রতিদিন প্রায় ৩ শতাধিক স্পীডবোট চলাচল করে। তবে মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অহিদুল আলম বলেন, নদী বন্দর কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী ভোলা-বরিশাল রুটে ৪৬টি স্পীডবোট চলাচল করে। এমনকি সাত বছর ধরে এক টাকাও ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়নি। বর্তমানে সাড়ে তিনশ টাকা ভাড়া নেয়া হচ্ছে। চিঠি পাওয়ার পরে আমারা গত ১৪ ডিসেম্বর সভা করে নদী বন্দরের নির্দেশনা মেনে চলছি। এদিকে গত ৫ ডিসেম্বর স্পীডবোট দূর্ঘটনার প্রতিবেদনে বলা হয়, স্পীডবোটের চালক একই সাথে স্পীডবোট চালানো এবং ভাড়া আদায় নিয়ে ব্যস্ত ছিল। তাই স্পীডবোটটি চালকের নিয়ন্ত্রণের বাহিরে চলে যায় এবং দূর্ঘটনা কবলিত হয়। চালকের এরূপ দায়িত্বহীনভাবে বোট পরিচালনার জন্য এ দূর্ঘটনা ঘটে বলে প্রাথমিকভাবে দূর্ঘটনার জন্য স্পীডবোট চালকই দায়ী ছিলেন।