বেতাগীতে পতিত জমিতেও মুগডাল চাষ, বাম্পার ফলন

বেতাগী প্রতিনিধি : উপকূলীয় জনপদ বরগুনার বেতাগীতে চলতি মৌসুমে মুগডালের বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রযুক্তি এবং কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে চলতি মৌসুমে ৫২ হেক্টর জমিতে আবাদ বেশি হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। উৎপাদন ভালো এবং লাভ বেশি হওয়ায় নতুন নতুন কৃষি উদ্যোক্তারা আগ্রহী হচ্ছেন মুগডাল চাষে। বেতাগীর কৃষকদের উৎপাদিত এসব মুগডাল এখন জেলার স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।
এতে একদিকে যেমন ভালো দাম পাচ্ছেন চাষিরা, অন্যদিকে মুগডাল চাষে দিন দিন আগ্রহ বাড়ছে প্রান্তিক চাষিদের। এর ফলে কৃষকের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে। প্রান্তিক চাষিদের মতে, সময়মতো কৃষি বিভাগ থেকে বীজ ও প্রশিক্ষণ সহায়তা পাওয়ায় ফলন ভালো হয়েছে। মাঠে চাষিদের মধ্য বেশিরভাগ নারী।
সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পুরুষের পাশাপাশি তারা কাজ করে যাচ্ছেন। বেতাগী উপজেলার একটি পৌরসভাসহ সাতটি ইউনিয়নের ৩৩২ হেক্টর জমিতে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। তবে আবাদ হয়েছে ৩৮৪ হেক্টর জমিতে।
উপকূলীয় অঞ্চলে পৌষ ও মাঘ মাসে আমন ধান মাঠ থেকে তোলার পরে স্থানীয় কৃষকরা জমি চাষ করে মুখডালের বীজ বপণ করে। এবার বেতাগী উপজেলায় প্রায় ১০ কোটি টাকার মুগডাল উৎপাদন হবে বলে আশা করছে কৃষি বিভাগ। রবি মৌসুমে পতিত থাকা জমিতে মুগডালের চাষ করছেন কৃষকরা।
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের গবেষক ড. সন্তোষ বসু বলেন, ‘উপকূলীয় এ অঞ্চলে বিশেষ করে বারি মুগ-৬ ও বারি মুগ-১৪, বারি-৬ ও বারি-১৪ জাতের আবাদ বেশি হয়েছে। ফলন আসার পর ৩ ধাপে মুগডাল উত্তোলন করতে পারেন ডাল চাষিরা।’
বেতাগী পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের স্থানীয় কৃষক স্বপন মোল্লা, ভবরঞ্জন ঢালী বলেন, ‘এ বছর মুগডালের ফলন ভালো হয়েছে। সময়মতো কৃষি বিভাগ থেকে বীজ ও সার দিয়েছে। এ ছাড়া কৃষি অফিস থেকে পরামর্শ দিচ্ছে।’ কয়েকজন মুগডাল চাষি বলেন, ‘এ বছর মুগডাল চাষ লাভজনক হয়েছে। সেচ ও সার ছাড়াই ভালো ফলন পাওয়া যায়।’
মুগডাল চাষি রিম্পা রানী বলেন, ‘মূলত মুগডাল প্রক্রিয়াজাতকরণের বেশিরভাগ কাজ মহিলাদের করতে হয়। যেমন ক্ষেত থেকে তোলা, মাড়াই, ঝারানো, শুকানোসহ সব কাজই মহিলাদের হাতে করতে হয়।’
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, রবি মৌসুমে পতিত জমিতে মুগডাল চাষ করছেন কৃষক। ফলন আসার পর তিন ধাপে ডাল উত্তোলন করতে পারেন চাষিরা।
উপজেলার বিবিচিনি ইউনিয়নের উপজেলার পুটিয়াখালী গ্রামের মুখডাল চাষি সুকুমার হাওলাদার (৭৬) বলেন, ‘এ বছর মুগডালের ফলন ভালো হয়েছে। আমি এক একর জমিতে ডাল আবাদ করেছি। সব খরচ বাদ দিয়ে প্রায় ৫০ হাজার টাকা লাভ থাকবে।’
মুখডাল চাষের সাথে সম্পৃক্ত একাধিক চাষি বলেন, ‘আবহাওয়া ভালো থাকায় এবং কৃষি বিভাগের সহযোগিতার কারণে এ বছর মুগ ডালের ফলন ভালো হয়েছে। খরচ বাদেও লাভ থাকবে।’
বেতাগী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তানজিলা আহমেদ বলেন, ‘আধুনিক জাতের মুগডাল চাষ এবং কৃষককে নিয়মিত পরামর্শ ও প্রযুক্তির ব্যবহারবিষয়ক প্রশিক্ষণ দিয়েছে কৃষি বিভাগ।
এ কারণেই জেলায় মুগডালের আবাদ বেড়েছে। মুগডাল একটি সুস্বাদু ও ডালজাতীয় পুষ্টিকর ফসল এবং মুগের রয়েছে বহুমুখী ব্যবহার। কৃষকের কম খরচে মুগডাল একটি লাভজনক ফসল।’