চর বিজয়ে পাখির কলতান কমছে, লাল কাঁকড়ার মিছিলও ছোট হয়ে আসছে

ডিসেম্বর ০৬ ২০২৪, ১৮:৪৩

কলাপাড়া প্রতিনিধি !! মাত্র আট বছর আগে আবিষ্কার চর বিজয়ের। কুয়াকাটা থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দুরে পুব দক্ষিণ দিকে সাগরবক্ষে এই চরটির অবস্থান। চারদিকে পানি থৈ থৈ করছে। মাঝখানে অবস্থান চরটির। লাল কাঁকড়া আর হাজার হাজার পাখির অবাধ বিচরণ এই চরে।

আনুমানিক সাড়ে চার কিলোমিটার আর আড়াই কিলোমিটার চরটির আয়তন। বর্ষা মৌসুমে জোয়ারে ডুবে থাকে। শীতকালে চরটি জেগে ওঠে। যখন মানুষ থাকে না তখন চরটিতে পাখিদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়। লাল কাঁকড়ার মিছিলে বেলাভূমি লাল রঙ ধারণ করে। এ চরটিতে এখন পর্যটক দর্শনার্থীর ফ্রি-স্টাইল বিচরণ রয়েছে। লাল কাঁকড়া ধাওয়া করা। পাখিদের উত্যক্ত করা। জেলেদের জাল দিয়ে চরের চারদিকে সুক্ষ্ম ফাঁসের জালের বাউন্ডারি ঘেরা দেওয়া।

জালে আটকে মারা যাচ্ছে পাখি। চরটির চারপাশে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের রেণু পোনা শিকার চলছে অবাধে। যেন কোন নিয়ম কানুনের বালাই নেই। মারা হচ্ছে লাল কাঁকড়া। জালে আটকে মারা পড়ছে পাখি। বিভিন্ন প্রজাতির কোটি কোটি মাছের রেণু পোনা শিকার পর্যন্ত চলছে ফ্রী স্টাইলে। যেন পরিবেশ প্রতিবেশ জীববৈচিত্র ধ্বংসের তান্ডব চলছে। যেন দেখার কেউ নেই। কলাপাড়া উপজেলা প্রশাসন, বনবিভাগ, মৎস্য বিভাগ সবাই যেন নির্বিকার। মাঝে মাঝে নৌ-পুলিশ নামকাওয়াস্তে রেণু পোনা শিকার বন্ধে অভিযান চালায়।

পরিবেশবিদ নেতৃবৃন্দের অভিযোগ, চরটি যেহেতু পাখি এবং লাল কাঁকড়ার অভয়ারণ্য তাই নৌপরিবহনে বিচরণ করার বিধি আরোপ করা যেতে পারে। কিনারে বেলাভূমিতে উঠলেও নির্দিষ্ট দূরত্ব থেকে জীববৈচিত্র দেখতে পর্যটক-দর্শনার্থীদের উদ্ধুদ্ধ করা প্রয়োজন। আর সূক্ষ্ম ফাঁসের জাল পাতা সম্পুর্নভাবে বন্ধ করতে হবে। লাল কাঁকড়া ধাওয়া করা এবং পাখিদের উত্যক্ত করা বন্ধ করতে হবে। নইলে এ চরটির মূল আকর্ষণ থাকবে না। এ ছাড়া চরটি আদৌ বনায়ন করার উপযোগী কী না তা নিয়ে গবেষণা করা প্রয়োজন।

জাহাঙ্গীর নগর বিশ^বিদ্যালয়ের প্রণিবিজ্ঞান বিষয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. কামরুজ্জামান মনির জানান, এচরটিতে পাখি, লাল কাঁকড়াসহ পরিবেশ প্রতিবেশ রক্ষায় পরিবেশবাদীদের পরামর্শ নিয়ে পরিকল্পিত উদ্যোগ নিতে হবে। পাখিদের অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করতে হবে। ইকোট্যুরিজম এর আওতায় এটির সঠিক বাস্তবায়ন করতে হবে। সরকারিভাবে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে।

কুয়াকাটা সী বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য সচিব ও কলাপাড়ার উপজেলা নির্বাহী অফিসার রবিউল ইসলাম জানান, এ চরটিতে পর্যটকদের অতি সাবধানে বিচরণ করতে হবে। কারণ পরিবেশ-প্রতিবেশ অতিথি পাখি, লাল কাঁকড়ার বিচরণ কোন কিছুর ক্ষতি করা যাবে না। বোটে সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এসব নিশ্চিতে ট্যুর গাইড কুয়াকাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পাখি যেন মারা না পড়ে এ জন্য মাছ ধরার বেড়জাল বন্ধে নৌপুলিশ ও ট্যুরিস্ট পুলিশকে বলা হয়েছে। রাতে কেউ যাতে ওখানে অবস্থান করতে না পারে এজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

এ ছাড়া জেলেদেরও শঙ্কা ওই চরটি দিনের বেলা ছাড়া ভ্রমণ করা ঠিক না। কারণ নিরাপত্তার ঝুঁকি রয়েছে। ইতোপূর্বে জেলে ট্রলারে জলদস্যূরা হামলা চালিয়ে লুটপাট চালিয়েছে। একারণে নিরাপত্তার বিষয়টি আগে নিশ্চিত করে পর্যটকের বিচরণ করার অনুমতি দেয়া প্রয়োজন রয়েছে।

তবে এ চরটি ঘিরে কুয়াকাটা-গঙ্গামতির মতো সম্ভাবনা গড়ে উঠছে পর্যটন কেন্দ্রীক। আর বাড়ল সমুদ্রের মধ্যে বাংলাদেশের চর এলাকা। মোটকথা প্রাকৃতিক ভারসাম্য, জীববৈচিত্র রক্ষায় এখনই সরকারের উদ্যোগ নেয়া দরকার। তবে জেলেদের অভিযোগ প্রভাশালী একটি মহল এই চরের আশপাশে মাছ ধরার জন্য জেলেদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করে আসছে।