বরিশাল জেলা ও মহানগর যুবদল
পকেট কমিটি নয়: সম্মেলন চায় তৃণমূল

ফাহিম ফিরোজ!! স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের পতনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দাবী আদায়ে সক্রিয় ছিলো বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদল। গত ১৬ বছর হামলা মামলার শিকার দলটি চায় যোগ্য ও ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন। বিএনপি ও তার অঙ্গ সংগঠনের কমিটিগুলো ঢেলে সাজাতে নির্দেশ দিয়েছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। কিন্তু বরাবরের মতো এবারও পকেট কমিটি গঠনের অশঙ্কা করছে নেতাকর্মীরা। ফলে দলের মধ্যে হাইব্রিড নেতাকর্মীদের আনাগোনা ভালো চোখে দেখছেন তারা।
জানা গেছে, বরিশাল মহানগর যুবদলের কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে পাঁচ বছর আগেই। তার ওপর সভাপতি-সম্পাদক দুজনই ভারপ্রাপ্ত। এভাবেই চলছে বরিশাল মহানগর ও জেলা যুবদলের কার্যক্রম। এ সময়ের মধ্যে যুবদলের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি পুনর্গঠনে উদ্যোগ না নেওয়ায় যেমন নতুন নেতৃত্ব তৈরি হয়নি, তেমনি নানা কারণে ভারাক্রান্ত হয়ে পড়েছেন ভারপ্রাপ্তরাও। এ পরিস্থিতিতে বরিশাল মহানগর ও জেলায় নতুন কমিটির দাবি তুলছেন পদবঞ্ছিত নেতারা।
সূত্র বলছে, ২০১৭ সালের এপ্রিলে বরিশাল মহানগর ও জেলা যুবদলের কমিটি ঘোষণা করা হয়। মহানগরে আখতারুজ্জামান শামীমকে সভাপতি ও মাসুদ হাসান মামুনকে সাধারণ সম্পাদক এবং জেলায় (দক্ষিণ) পারভেজ আকন বিপ্লবকে সভাপতি ও এইচএম তসলিম উদ্দিনকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। এ দুই কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয় ২০১৯ সালের এপ্রিলে। এরপর আর সম্মেলন বা নতুন কমিটি গঠন করার দৃশ্যমান উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এর মধ্যে সরকারবিরোধী আন্দোলনেও তেমন ভূমিকা রাখতে পারেনি বরিশাল যুবদল। বরং অভ্যন্তরীণ কোন্দল আর আন্দোলনে নিষ্ক্রিয়তায় পদ হারাতে হয়েছে মহানগর যুবদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে। এ ছাড়া রাজপথের ত্যাগী নেতা হিসেবে পরিচিত সভাপতির মৃত্যুতে সাধারণ সম্পাদকের একক নিয়ন্ত্রণে চলে যায় জেলা (দক্ষিণ) যুবদল।
দলীয় সূত্র জানায়, দলীয় কার্যালয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনে বিশৃঙ্খলার অপরাধে ২০২০ সালের ২৬ ডিসেম্বর দল থেকে বহিষ্কার হন মাসুদ হাসান। এরপর ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের পান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাজাহারুল ইসলাম জাহান। দুই বছর পর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার হলেও মহানগরের সেই পদ ফিরে পাননি তিনি।
এদিকে সরকারবিরোধী আন্দোলনে নিষ্ক্রিয় ছিলেন মহানগর সভাপতি শামীম। শেষ পর্যন্ত ২০২৩ সালে তাকে বহিষ্কার করা হয়। একই বছরের ২ ডিসেম্বর ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পান মাকসুদুর রহমান মাসুদ।
মহানগর যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাজাহারুল ইসলাম জাহান বলেন, আমরা কাউন্সিলের আয়োজন করেছিলাম, করোনার কারণে তা আর সফল হয়নি। তবে খুব শিগগির মহানগর যুবদলের কাউন্সিলের আয়োজন করা হবে।
মহানগরের মতোই ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দিয়ে চলছে জেলা যুবদলের কার্যক্রম। সভাপতির মৃত্যুতে বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন মামুন রেজা খান। জেলা যুবদলের সভাপতি ছিলেন কর্মীবান্ধব নেতা হিসেবে পরিচিত পারভেজ আকন বিপ্লব। ২০২১ সালের ৯ জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন তিনি। এরপর দায়িত্ব পান মামুন রেজা। কিন্তু জেলা যুবদলকে একক নিয়ন্ত্রণে নিয়ে যান সাধারণ সম্পাদক তসলিম উদ্দিন। এখন তার ইশারায় চলে দক্ষিণ জেলা যুবদলের কার্যক্রম।
এদিকে, গত ২৭ অক্টোবর দেশব্যাপী উদযাপন হয়েছে যুবদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। দিবসটিতে বরিশালেও কর্মসূচি ছিল জেলা ও মহানগর যুবদলের। ওই কর্মসূচিতে যুবদলে নতুন নেতৃত্বের দাবি তোলেন সাবেক ও বর্তমান ছাত্রনেতারা।
তৃণমূল যুবদলের কয়েকজন নেতা বলেন, ‘বরিশাল যুবদলের নিয়ন্ত্রণ সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি হয়ে আছে। যে কারণে পাঁচ বছর আগে কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হলেও নতুন করে কাউন্সিল বা কমিটি গঠনের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। যারা নেতৃত্বে আছেন, তারাও আন্দোলন সংগ্রামে ভূমিকা রাখতে না পারলেও পদ ছাড়তে রাজি নন। ফলে আন্দোলন সংগ্রামে ভূমিকা রাখা অনেক নেতাকর্মী পদবঞ্ছিত হয়ে আছেন।’
জেলা যুবদলের নেতাকর্মীদের দাবী কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠন করতে হবে। সেক্ষেত্রে হামলা মালমা ও কারাগারে যাওয়া নেতাকর্মীদের নেতৃত্বে নেয়ার জোড় দাবী জানান।
জানা গেছে, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর যুবদলের কেন্দ্রীয় নেতারা এরই মধ্যে বিভাগীয় শহরগুলোতে সাংগঠনিক সফর শুরু করেছেন। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দিকনির্দেশনায় শিগগির সব জেলায় কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি হবে।