১৮ জুলাই যাত্রাবাড়ীতে গুলিতে নিহত হন ঢাকা টাইমসের সাংবাদিক মেহেদি হাসান
ছেলে হারানোর শোকের ওপর ঋণ শোধের চাপ: ঈদ আনন্দ ম্লান

বাউফল প্রতিনিধি : পরিবারের সবাই মিলে হৈহুল্লোড় ও আনন্দ করে গত বছর ঈদ উদযাপন করেছিলেন সাংবাদিক মেহেদি হাসান। এ বছর তিনি আর নেই। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি না থাকায় পরিবারে নেমে এসেছে অর্থকষ্ট।
এর মধ্যে যুক্ত হয়েছে নতুন ঘর তোলার সময় নেওয়া ঋণের কিস্তি পরিশোধের চাপ। সংসারের খরচ ও ঋণের কিস্তি নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন মেহেদির অসুস্থ বাবা মোশারফ হোসেন হাওলাদার (৬৫)। এখন তাঁর কাছে ঈদের আনন্দ বলে কিছু নেই।
গত বছরের ১৮ জুলাই পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে গুলিতে নিহত হন দৈনিক ঢাকা টাইমসের সাংবাদিক মেহেদি হাসান। তাঁর বাড়ি পটুয়াখালীর বাউফলের ধুলিয়া ইউনিয়নের হোসনাবাদ গ্রামে। মেহেদি স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে ঢাকার কেরানীগঞ্জে বসবাস করতেন।
মোশারফ হোসেন ঢাকার দৈনিক আলোর জগতের ক্রাইম রিপোর্টার ছিলেন। হার্টে রিং পরানো মোশারফ পাঁচ-ছয় বছর ধরে কোনো কাজ করতে পারেন না। ছোট ছেলে মেজবা উদ্দিন কাইফ স্থানীয় ধুলিয়া দাখিল মাদ্রাসায় অষ্টম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে।
মোশারফ হোসেন জানান, মেহেদি ঢাকা টাইমসের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক ছিলেন। স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে ঢাকায় থাকলেও বাবা-মা ও ছোট ভাইয়ের সব খরচ চালাতেন। মেজ ছেলে জাহিদ হাসান ঢাকায় থাকলেও পরিবারের কারও খোঁজ নেন না।
তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, গত বছর ঈদের আগে গ্রামে এসে গ্রামীণ ব্যাংক, আশা, উদ্দীপন ও কৃষি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে নতুন ঘর তুলে দেয় মেহেদি। কিন্তু এখন কে আমার ওষুধ কিনে দেবে আর ঋণের কিস্তিইবা কে দেবে? রমজানে খাওয়া-দাওয়া নিয়েই কষ্ট হয়, আবার ঈদ। এর মধ্যে গ্রামীণ, আশা ও কৃষি ব্যাংক থেকে কিস্তির টাকার জন্য নোটিশ দিয়েছে। বারবার বাড়িতে আসে।
এখন মনে হয় কোথাও পালিয়ে যাই– বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন মোশারফ। পরে তিনি জানান, গ্রামীণ ব্যাংকে স্ত্রীর নামে প্রায় দেড় লাখ টাকা, কৃষি ব্যাংকে তাঁর নামে দেড় লাখ টাকা, আশায় স্ত্রীর নামে ৮০ হাজার এবং উদ্দীপনে ৬৫ হাজার টাকা ঋণ রয়েছে।
উদ্দীপনের কালিশুরি শাখা ব্যবস্থাপক উজ্জ্বল দাস বলেন, এখনও ৪২ হাজার ৭৬৯ টাকা পাওনা রয়েছে। আমরা তো আর বেতনের টাকা দিয়ে কিস্তি দেব না। তাদের সময় দিয়েছি।