স্বপ্নভঙ্গের বেদনায় আত্মহত্যার চেষ্টা

‘জুলাই যোদ্ধা’র বিষপান

মে ১০ ২০২৫, ১৯:৩১

বাউফল প্রতিনিধি : ‘জুলাই যোদ্ধা’ খ্যাত রেজাউল করিম—এক সময়ের রাজপথ কাঁপানো সাহসী যুবক। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার রাতে সেই যুবককেই পাওয়া গেল পরিত্যক্ত একটি স্থানে। হাতের মুঠোয় বিষের প্যাকেট, দেহে প্রাণহীনতা। সময়মতো উদ্ধার করায় প্রাণে বেঁচে গেলেন, কিন্তু রেখে গেলেন হাজারো প্রশ্ন—সাহসী এই তরুণ এতটা ভেঙে পড়লেন কেন? ঘটনাটি ঘটে গত ৮ মে রাতে, পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার নওমালা ইউনিয়নের আলীপুরা গ্রামে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রেজাউল করিম (২৫) পারিবারিক কলহ, আর্থিক অনিশ্চয়তা ও মানসিক চাপে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে চেয়েছিলেন। তাকে অচেতন অবস্থায় আলীপুরা বাজারসংলগ্ন একটি গাছের নিচে পড়ে থাকতে দেখা যায়। তার হাত থেকে উদ্ধার হয় ইঁদুর মারার বিষের প্যাকেট। স্থানীয়দের তাৎক্ষণিক সহযোগিতায় তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়।

রেজাউল করিম পশ্চিম যৌতা গ্রামের আনসার হাওলাদারের ছেলে। তিনি ঢাকায় জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে অংশ নিয়ে নিয়ে এলাকায় ‘জুলাই যোদ্ধা’ নামে পরিচিতি পান। আন্দোলনের সময় ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকায় পুলিশের গুলিতে আহত হন রেজাউল ও তার ছোট ভাই আশিকুর রহমান হৃদয় (১৭)। হৃদয় পরে দীর্ঘ চিকিৎসার পর ২০২৫ সালের ৪ এপ্রিল বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মারা যান। রেজাউলকে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, তার শরীর থেকে গুলি অপসারণ করা হয়।

জানা গেছে, রেজাউল ও তার ভাই ঢাকায় নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। আন্দোলনের পর থেকে রেজাউল মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন এবং কর্মসংস্থানের সংকটে হতাশায় দিন কাটাচ্ছিলেন। এ ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেকেই রেজাউলের সাহসিকতার প্রশংসা করলেও প্রশ্ন তুলেছেন—‘এমন একজন সাহসী যুবক কেন আজ বেঁচে থাকার ইচ্ছা হারিয়ে ফেলেন?’

নেটিজেনদের একাংশ প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, ‘জুলাই যোদ্ধা’দের শুধু রাজপথেই নয়, জীবন-সংগ্রামে টিকে থাকতে পাশে থাকা দরকার। মানসিক স্বাস্থ্য, পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থানের বাস্তব ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ এখন সময়ের দাবি।