প্রতিদিন ঘটছে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি
মরণ ফাঁদ ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক

ফাহিম ফিরোজ !! দিনে দিনে মরণ ফাঁদে পরিণত হচ্ছে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক। প্রতিদিন ঘটছে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি। কিন্তু সড়ক ও জনপথ বিভাগসহ দায়িত্বশীলরা নিচ্ছে না আপাতদৃষ্ট কোন পদক্ষেপ। ফলে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি। আর শীত মৌসুম এলেই সড়ক পথে আরও বেড়ে যায় দুঘটনা। কয়েক বছর আগেও এই মহাসড়কে এতো দুর্ঘটনা হতো না। পদ্মাসেতু চালু হওয়ায় সড়কে বাড়ছে যানবাহনের চাপ। একই সাথে বাড়ছে দুর্ঘটনা। কিন্তু বাড়েনি মহাসড়কের প্রশস্ততা। ফলে সরু রাস্তায় যানবাহন চলাচল করতে গিয়ে বাড়ছে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির সংখ্যা।
জানাগেছে, পদ্মা সেতু চালুর পরেই বরিশালের সাথে রাজধানীর সড়কপথে যাতায়াত আগের চেয়ে কয়েকগুন বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে যাত্রীর সাথে সাথে বাসের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। অথচ সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের প্রশস্থতা বৃদ্ধি পায়নি। অপরদিকে মহাসড়কে বাস-ট্রাকসহ যানবাহন দাড় করিয়ে রাখে অসাধু চালকরা। এতে মহাসড়কে সৃষ্টি হচ্ছে চরম বিশৃঙ্খলা। আবার সরু মহাসড়কে পাল্লাদিয়ে বেপরোয়া গতিতে চলা দুরপাল্লার পরিবহন ও থ্রী-হুইলারের পাশাপাশি ছোট ছোট যানবাহন চলাচল করায় প্রতিদিন বাড়তি উপদ্রব হয়ে দাঁড়িয়েছে ছোট-বড় অসংখ্য দুর্ঘটনা।
সূত্রমতে, ঢাকা-বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কে পদ্মা সেতু চালুর পর রাজধানীর সাথে বরিশালের সড়ক যোগাযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে বহুগুণ। দেশের বিভিন্নপ্রান্ত থেকে মানুষ বরিশালে যাতায়াত করছেন। বিশেষ করে দেশের সর্বদক্ষিণের পর্যটন কেন্দ্র সাগরকন্যা কুয়াকাটায় আসা যাওয়া করা পর্যটকদের ব্যবহার করতে হচ্ছে এই মহাসড়কটি। ফলে সড়কের ওপর দিন দিন চাঁপ বেড়ে যাওয়ায় ঘটছে দুর্ঘটনা। ট্রাফিক ব্যবস্থা জোরদার করা হলেও দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব হচ্ছেনা।
জানাগেছে, গতকাল রোববার রাতে ঘন কুয়াশার কারণে মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে ৩টি গোল্ডেন লাইন, ২টি এনা পরিবহণ, ১টি সাকুরা পরিবহণ, ২টি প্রাইভেট কার , ১টি ডিস্ট্রিক্ট ট্রাকসহ প্রায় ১০টি যানবাহন মারাক্তক ভাবে দুর্ঘটনা ঘটে। এতে যানবাহনগুলোর সামনের অংশ ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এছাড়া ১ জন নিহত এবং ২০ থেকে ৩০ জনের অধিক আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
এর আগে শনিবার দুপুরে মাদারীপুরের রাজৈরে দুটি বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে আহত হয়েছেন কমপক্ষে ১০ জন। শনিবার (২১ ডিসেম্বর) দুপুরে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে উপজেলার বড়ব্রিজ এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ সময় মহাসড়কের উভয় পাশে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। গত সপ্তাহে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের ইচলাদিতে ট্রলি ও নসিমনের সংঘর্ষে ১ জন নিহত হয়। নথুল্লাবাদে ট্রাকের ধাক্কায় গৃহবধূ নিহত হয়।
হাইওয়ে পুলিশ জানায়, ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের ভুরঘাটা, ইল্লা, বার্থী, তারাকুপি, কটকস্থল, সাউদেরখাল পাড়, নীলখোলা, টরকি, গয়নাহাট, গৌরনদী, মাহিলারা, বাটাজোর, সানুহার, জয়শ্রী, ইচলাদী, শিকারপুর দোয়ারিকা টোল প্লাজা, নতুনহাট রহমতপুর ব্রিজ দুর্ঘটনার অন্যতম স্থান। এসব স্থানের মহাসড়কটি সরু হওয়ার পাশাপাশি অদক্ষ চালক, দূরপাল্লার পরিবহনের সঙ্গে থ্রি-হুইলারের পাল্লা দেওয়ায় ঘটছে দুর্ঘটনা। চালকরা বলছে অবৈধ যানবাহন আর অদক্ষ চালকের কারণে ঘটছে এসব দুর্ঘটনা।
অন্যদিকে বিআরটিএ সূত্র বলছে, সরু রাস্তা ও ফিটনেসবিহীন যানবাহনের কারণে হচ্ছে মহাসড়কে দুর্ঘটনা। আর হাইওয়ে পুলিশ বলছে অধিক গতি, বেপরোয়া চালনাই হচ্ছে এ সড়কে দুর্ঘটনার কারণ। তবে সড়ক প্রশস্তকরণ ট্রাফিক ব্যবস্থা জোরদারসহ কিছু উদ্যোগ নেওয়া জরুরি বলে মনে করছেন সুশীল সমাজ।
বিআরটিএ অফিস সূত্রে জানা যায়, সরু রাস্তা হওয়ায় এ মহাসড়কে দুর্ঘটনা বাড়ছে। রাস্তা প্রশস্ত হলে দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব। এছাড়া মোবাইল কোর্ট বসিয়ে যানবাহনের কাগজপত্র পরীক্ষা করা এবং সচেতনতা কার্যক্রম চালিয়ে আসছে বিআরটিএ।
হাইওয়ে পুলিশ বলছে, দুর্ঘটনা রোধে চেকপোস্ট বসিয়ে লাইসেন্স পরীক্ষা করা হচ্ছে। এছাড়া অধিক গতি, ফিটনেস না থাকা, কালো ধোঁয়া, কাগজপত্র না থাকাসহ বিভিন্ন অপরাধে মামলা দেয়া হচ্ছে।