অবশেষে ববি ভিসি, প্রো-ভিসি ও ট্রেজারারকে অপসারণ

মে ১৩ ২০২৫, ২২:১২

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অবশেষে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) ড. শুচিতা শরমিনকে অপসারণ করা হয়েছে। এছাড়া প্রো ভিসি ড. গোলাম রাব্বানি, ট্রেজারার ড. মোঃ মামুন অর রশিদকে অপসারণ করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও চ্যাঞ্চেলরের আদেশক্রমে সিনিয়র সহকারী সচিব এ.এস.এম কাসেম স্বাক্ষরীত এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। ভিসি, প্রো-ভিসি ও ট্রেজারারকে অপসারণের খবরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা আনন্দ মিছিল বের করেছে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্জ ড. শুচিতা শরমিনকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট ষ্টাটিজ বিভাগের অধ্যাপক, প্রো-ভিসি ড. গোলাম রাব্বানিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনষ্টিটিউট অব সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার এন্ড রিসার্চ বিভাগে ও ট্রেজারার ড. মোঃ মামুন অর রশিদকে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৌলিক বিজ্ঞান বিভাগ, প্রাণী বিজ্ঞান এবং ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদের চেয়ারম্যান হিসেবে যোগদান করতে বলা হয়েছে। এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়।

এর আগে গত সোমবার রাত থেকে আমরণ অনশনে বসা শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করে গতকাল মঙ্গলবার সকালে দুটি প্রশাসনিক পদ থেকে পদত্যাগ করেন ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. আলমগীর মোল্লা। সেখানে তিনি ব্যক্তিগত কারণে পদত্যাগের কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শেরে বাংলা হলের আবাসিক শিক্ষক এবং ঢাকা ও বরিশালের গেস্ট হাউজের আহ্বায়ক পদ থেকে পদত্যাগ করেন।

তার পদত্যাগের চিঠি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে, আরো তিনজন শিক্ষক প্রশাসনিক দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেন। তাদের পদত্যাগপত্রের ছবিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। সহকারী প্রক্টরের পদ থেকে পদত্যাগ করেন আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আলমগীর হোসেন। আইকিউএস এর পরিচালক পদ থেকে পদত্যাগ করেন ড. মো. সোহেল চৌধুরী। তিনি ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। এছাড়া শেরে বাংলা হলের আবাসিক শিক্ষকের পদ থেকে পদত্যাগ করেন মামুনুর রহমান। তিনি অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক।

শিক্ষার্থীরা জানান, ববি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শূচিতা শরমিনের পদত্যাগের দাবিতে গত সোমবার রাত থেকে আমরণ অনশনে থাকা শিক্ষার্থীদের পাঁচজন মঙ্গলবার দুপুরের পর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাদের একজন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে আবারো অনশনস্থলে আসেন, বাকি চারজনকে স্যালাইন দেওয়া হয়। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা অনশন ছেড়ে উঠবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন।

প্রসঙ্গত, উপাচার্যের ডাকা ৮৭তম সিন্ডিকেট সভাকে অবৈধ দাবি করে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি আন্দোলনে নামেন একদল শিক্ষার্থী। উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাওয়ের একপর্যায়ে গেট ভাঙচুর করনে তারা। এই ঘটনায় ১৭ জন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে বন্দর থানায় মামলা করা হয়।

এরপর মামলা প্রত্যাহারসহ বিভিন্ন দাবিতে উপাচার্যকে একাধিকবার আলটিমেটাম দেন আন্দোলনকারীরা। একপর্যায়ে মুচলেকা দেওয়ার শর্তে মামলা প্রত্যাহারের প্রস্তাব দেন উপাচার্য। এই প্রস্তাবের পর ফুঁসে ওঠেন শিক্ষার্থীরা। তারপর থেকে উপাচার্যের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে মাঠে নামেন তারা।

গত ৭ মে উপাচার্যের বাসভবনের ফটকে তালা দিয়ে পদত্যাগের হুঁশিয়ারি দেন আন্দোলনকারীরা। পদত্যাগ না করলে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার হুমকিও দেন তারা।

এরই মধ্যে ববি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিনের বিরুদ্ধে নিয়োগ নিয়ে ওঠা অভিযোগের সত্যতা পেয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে মতামত পাঠায় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। ইউজিসির মতামত এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের ফলে সৃষ্ট পরিস্থিতির মধ্যে, গত ৮ মে ববি উপাচার্যকে অপসারণের প্রস্তাব দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ।

এরপরেই উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সমর্থন জানান শিক্ষকদের একাংশ। সেই ধারাবাহিকতায় গত ১১ মে সন্ধ্যায় ক্যাম্পাসে মশাল মিছিল এবং ১২ মে কমপ্লিট শাটডাউন ঘোষণা করেন আন্দোলনকারীরা।