হার্টের রিংয়ের দাম কমছে ৩৬ শতাংশ

অনলাইন ডেস্ক : দেশে হৃদরোগীদের জন্য স্বস্তির বার্তা নিয়ে এসেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নতুন প্রজ্ঞাপন। তিনটি কোম্পানির ১০টি মডেলের করোনারি স্টেন্ট বা হার্টের ‘রিং’-এর দাম সর্বোচ্চ ৩৬ শতাংশ পর্যন্ত কমানো হয়েছে। নতুন এই মূল্যসীমা অনুযায়ী, এসব স্টেন্ট এখন বিক্রি হবে ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকার মধ্যে।
রোববার (৩ আগস্ট) স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, মূল্যছাড় এসেছে বস্টন সায়েন্টিফিক, অ্যাবোট এবং মেডট্রনিক কোম্পানির ১০টি নির্দিষ্ট স্টেন্টে, যেগুলো এতদিন দেশে তুলনামূলক উচ্চ মূল্যে বিক্রি হচ্ছিল।
হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীর ধমনীতে রক্তপ্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে যে স্টেন্ট প্রতিস্থাপন করা হয়, সেটিই সাধারণ ভাষায় ‘হার্টের রিং’ নামে পরিচিত। মূলত অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি পদ্ধতিতে হৃদপিণ্ডে রিং পরানো হয়ে থাকে।
সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, মেডট্রনিক কোম্পানির ‘রিসলিউট অনিক্স’ স্টেন্টের দাম ১ লাখ ৪০ হাজার ৫০০ টাকা থেকে কমিয়ে ৯০ হাজার টাকায় নির্ধারণ করা হয়েছে। একই কোম্পানির ‘অনিক্স ট্রুকর’ এখন বিক্রি হবে ৫০ হাজার টাকায়, যা আগে ছিল ৭২ হাজার টাকা।
বস্টন সায়েন্টিফিকের ‘প্রোমাস এলিট’ স্টেন্ট ৭৯ হাজার থেকে কমে হয়েছে ৭২ হাজার টাকা এবং ‘প্রোমাস প্রিমিয়ার’ ৭৩ হাজার থেকে নামানো হয়েছে ৭০ হাজার টাকায়। সাইনার্জি সিরিজের তিনটি মডেল—‘সাইনার্জি’, ‘সাইনার্জি শিল্ড’ ও ‘সাইনার্জি এক্সডি’—এর দাম একযোগে ৯০ হাজার, ৯০ হাজার এবং ১ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর আগে এই তিনটি স্টেন্ট যথাক্রমে বিক্রি হতো ১ লাখ ১৭ হাজার, ১ লাখ ২০ হাজার ও ১ লাখ ৮৮ হাজার টাকায়।
অ্যাবোট কোম্পানির ‘জায়েন্স প্রাইম’ স্টেন্টের দাম ৬৬ হাজার ৬০০ টাকা থেকে কমিয়ে ৫০ হাজার টাকায় আনা হয়েছে। একই কোম্পানির ‘জায়েন্স আলপাইন’ এবং ‘জায়েন্স সিয়েরা’ স্টেন্টের আগের দাম ছিল ১ লাখ ৪০ হাজার টাকার বেশি, নতুন দামে এগুলো এখন পাওয়া যাবে ৯০ হাজার টাকায়।
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ জানিয়েছে, হাসপাতালগুলো নির্ধারিত দামের চেয়ে সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ সার্ভিস চার্জ নিতে পারবে। এ বিষয়ে তদারকির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরকে।
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. মো. আকতার হোসেন জানিয়েছেন, “মূল্য নির্ধারণ কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তিন কোম্পানির ১০ ধরনের রিংয়ের দাম কমানো হয়েছে। পর্যায়ক্রমে অন্য কোম্পানির রিংগুলোর দাম নিয়েও সিদ্ধান্ত আসবে।”
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে ব্যবহৃত স্টেন্টগুলোর প্রায় সবই আমদানি করা হয় ইউরোপ-আমেরিকা ও এশিয়ার উন্নত দেশগুলো থেকে। যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ফ্রান্স, জাপান, ভারতসহ একাধিক দেশ থেকে রিং আমদানি করে স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলো। এসব রিংয়ের দাম হাসপাতালের তালিকায় ঝুলিয়ে রাখা হয়, সেখান থেকে রোগী বা তার পরিবার রিং বেছে নেয়।
২০২৩ সালের এপ্রিলেও ২৩ ধরনের স্টেন্টের দাম নির্ধারণ করেছিল ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। এবার আরও ১০টি স্টেন্টের নতুন দামে জীবনরক্ষাকারী এই চিকিৎসা সেবাটি সাধারণ মানুষের নাগালে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।